এডমন্টন – কানাডার এক অজানা শহরের এদিক ওদিক।

বর্তমান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র হল কানাডা, যার অবস্থান রাশিয়ার ঠিক পরেই। কানাডার শহরগুলো বলতে আমরা সকলেই টরোন্টো, মন্ট্রিয়াল, অটোয়া বা ভ্যানকুভারকেই বেশি চিনি। কিন্তু এগুলো ছাড়াও আরও অনেক শহর রয়েছে এই দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্রটিতে। আমাদের অচেনা শহরগুলোর তালিকায় যদি এডমন্টন এর নাম পরে যায়, তবে তা অবাক করার মত কিছু না। তবে আপনাদের জানাতে হবে যে, এই শহরটি কানাডার পঞ্চম বৃহত্তম শহর যেখানে রাজধানী অটোয়ার অবস্থান তার ঠিক পরেই। শহরটি ভ্রমণপ্রিয়দের নিকট এতটা জনপ্রিয় নয় এবং এখানে আসলে আকর্ষনীয় তেমন কিছুই নেই। তারপরও ঘুরে দেখবার মত অনেক জায়গা রয়েছে যা যে কারোর নিকট অনন্য মনে হতে পারে। আমি কানাডায় আসবার পর, এখানে প্রায় দীর্ঘ ৭ মাস যাবত বসবাস করেছি। তাই আজ কথা হবে এই অজানা শহরটিকে নিয়ে, আমার এখানে বসবাসকালে আমি যতদূর দেখতে পেরেছি।

প্রথমে শহরটির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি সম্পর্কে জানা যাক। এডমন্টন হল কানাডার আলবার্তা প্রদেশের রাজধানী শহর। রাজধানী শহর হলেও এটি প্রদেশের বড় শহর নয়। ক্যালগেরি হল উক্ত প্রদেশের বড় শহর এবং বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র যা এডমন্টন থেকে ৪ ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত। তবে এই প্রদেশের সকল কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তর এবং কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অফ আলবার্তার অবস্থান এখানে। শহরে সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান এবং অন্যান্য শহরের তুলনায় জীবনযাত্রার খরচ অনেক কম। শীতকালে এখানকার তাপমাত্রা -৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্তও নামতে পারে আবার গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৩২ ° সেলসিয়াস পর্যন্তও বাড়তে পারে। পাব্লিক ট্রানজিট সুবিধা মোটামুটি ভালোই, কিন্তু এখানে নিয়মিত চলাচলের জন্য নিজের একটা গাড়ি থাকাই ভাল। এখানকার এয়ারপোর্টে তেমন কোন ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট আসে না। তবে কানাডার প্রায় সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব। আলবার্তার প্রধান টুরিস্ট আকর্ষণ ব্যানফ ন্যাশনাল পার্ক ও জ্যাস্পার ন্যাশনাল পার্ক এখান থেকে বেশ দূরে তাই এখানে পর্যটকদের আনাগোনা কম বললেই চলে। তারপরেও অনেকে আসেন ওয়েষ্ট এডমন্টন মল থেকে শপিং করার জন্য এবং এখানে কিছু পাব্লিক পার্ক রয়েছে যা কোন টুরিস্ট স্পটের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। তবে চলুন ঘুরে আসা যাক সেসকল স্থান থেকে এবং বর্ণনা করা যাক সেসকল উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো সম্পর্কে।

এডমন্টন শহরের এদিক ওদিক।

ওয়েষ্ট এডমন্টন মল

এটি শহরের মূল আকর্ষণ, কারণ এটি হল উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বৃহত্তম শপিং মল। শহরের উত্তর-পশ্চিম এলাকায় অবস্থিত এই শপিং মল প্রায় ৫৩ লাখ স্কয়ার ফিট স্থান জুড়ে আছে। যা প্রায় ৯০ টি ফুটবল মাঠের সমান। এটি ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সর্ববৃহৎ শপিং মল বলে পরিচিত ছিল। এখানে প্রায় ৮০০ টিরও বেশি দোকান ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আউটলেট রয়েছে। আনন্দ বিনোদনের ব্যবস্থারও কোন কমতি নেই। রয়েছে একটি থিম পার্ক, ইন্ডোর বিচ, আইস স্কেটিং গ্রাউন্ড, মুভি থিয়েটার এবং আরও অনেক কিছু। এই মল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।

ওয়েস্ট এডমন্টন মল – উত্তর আমেরিকার সর্ববৃহৎ শপিং মলের এদিক ওদিক।  

ওয়েস্ট এডমন্টন মলের এদিক ওদিক।

ডসন পার্ক/ রিভার ভ্যালি পার্ক

এডমন্টন শহরতলী এলাকার মানুষদের কাছে এই পার্কটি খুবই জনপ্রিয়। পার্কের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নর্থ সাস্কাচোয়েন রিভার এখানকার মূল আকর্ষণ। এই নদীটির উৎপত্তি হয়েছে কানাডার উত্তরে অবস্থিত রকি মাউন্টেন থেকে এবং এটি আলবার্তা প্রদেশ হয়ে সাস্কাচোয়েন প্রদেশে সাউথ সাস্কাচোয়েন রিভারের সাথে মিলিত হয়েছে। পরবর্তীতে এই সম্মিলিত দু নদীর পানি হাডসন সাগরে গিয়ে মিলে গেছে। এই পার্কে আপনি নদীর ধার বেয়ে হেঁটে যেতে পারবেন অনেক দূর। এবং বাতাসের মৃদু বেগ, আপনার মনে এনে দেবে প্রশান্তির ছায়া। তবে বাতাসের গতিবেগ যদি বেশি হয়, তবে তা আপনার বিরক্তির কারণও হতে পারে। এখানে বাতাসের গতিবেগ মাঝেমধ্যে খুবই প্রবল হয়। এটা বলতে গেলে এখানকার আবহাওয়ার অংশ বলা চলে। নদীটি দেখতে অনেকটা সিলেটে অবস্থিত সুরমা নদীর মত। এই সরু নদীর একপাশে পার্ক এবং অন্যপাশে আছে ঘন জঙ্গল। এলাকার লোকজন প্রায়ই এখানে মর্নিং বা ইভিনিং ওয়াকের জন্য আসেন। সপ্তাহ শেষে এখানে ভিড়ের পরিমাণ একটু বেশি হয়, তবে আমরা বাংলাদেশীরা যা বুঝি তার তুলনায় তা একেবারেই নগণ্য। নদীর ধারে বসে শান্ত সময় পার করবার জন্য রয়েছে অনেকগুলো বসবার জায়গা। এছাড়াও এখানকার মানুষজন ঘাসের চাদরে ঢাকা ওপেন স্পেসগুলোতে শুয়ে বসে সময় কাটাতেও পছন্দ করেন। অনেকে চলে আসেন পরিবার পরিজন নিয়ে বনভোজন করতে। এই পার্কে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে একবার অনেক পথ হেঁটে উপর থেকে নিচে নামতে হবে এবং গমনের সময়ে নিচ থেকে উপরে একই পথ অতিক্রম করতে হবে। এটা অনেকটা পাহাড়ে হাইকিং করবার মত। কারণ, নদীর পাড়ে অবস্থিত হওয়ায় তা শহরের মূল ভূখন্ড থেকে কিছুটা নিচে অবস্থিত। সেই হাইকিং এর পথটি একটি ঘন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে চলে গিয়েছে। এবং পার্কে প্রবেশ এবং বের হবার জন্য অনেকগুলো ট্রেইল রয়েছে। গ্রীষ্মকালে পার্কটিকে সবুজের সম্ভার মনে হলেও, শীতকালে তা অতিশুভ্র রূপ ধারণ করে। চারিদিক বরফে ঢাকা থাকে এবং নদীর পানিও জমে যায়। তখন অনেককেই দেখা যায় যে, নদীর ওপর দিয়ে হেঁটে পার হতে। তাছাড়াও, পার্কের ঢালু স্থানগুলো বরফে জমে গেলে দেখা যায় অনেককে স্কিয়িং করতে।

img_0833img_0847

রিভার ভ্যালি পার্কের কিছু দৃশ্য।

img_0475

পার্কের শীতকালীন চিত্র।

বোর্ডেন্স পার্ক 

শহরতলী এলাকায় অবস্থিত আরও একটি পার্ক যা ঠিক এডমন্টন সিটি এক্সিবিশন সেন্টারের সামনে অবস্থিত। পার্কের আরেক পাশে রয়েছে নর্থল্যান্ড ফার্ম যেখানে গ্রীষ্ম কালে বিভিন্ন ধরণের সবজির চাষ করা হয়। এই পার্কটি এত আহামরি কিছু নয় বা এখানে আহামরি কিছু দেখবার আছে। পার্কের ভিতরে নানা ধরণের ভাস্কর্য রয়েছে যার কারণে অন্যান্য পার্ক থেকে এটা একদমই আলাদা। পুরো পার্কটি সবুজের চাদরে ঢাকা, ভিতরে হাঁটার জন্য আলাদা ওয়াকওয়ে রয়েছে। শিশুদের জন্য আলাদা প্লে- গ্রাউন্ড রয়েছে। বনভোজনের জন্য অনেকগুলো শেড রয়েছে। মর্নিং বা ইভিনিং ওয়াক করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলে বসার বেঞ্চের অভাব নেই। সপ্তাহশেষে কিংবা বিশেষ কোন দিনে এখানে ভিড় একটু বেশি থাকে। যেমন গত জুলাই ১ এ অনুষ্ঠিত কানাডা ডে তে এখানে ভিড় লক্ষ্যনীয় ছিল। এবং গত রোজার ঈদের দিনেও এখানে অনেক বাঙালী পরিবার এবং অনেক মুসলিম পরিবার এসেছিলেন সময় কাটাতে। এই পার্কে সারি সারি পাইন গাছ এবং ঝাউ গাছ লক্ষ্যনীয়। গ্রীষ্মকালে এই স্থানটি চিরসবুজ থাকলেও, শীতকালে তা হয়ে ওঠে চিরশুভ্র। শীতকালীন সময়ে এই পার্ক জনমানব শূন্য থাকে সবসময়।

img_10386833b313-00bb-4c4b-89ac-ffa7734a2820

বোর্ডেন্স পার্কের কিছু দৃশ্য। 

পার্কের ভিতর কিছু স্থাপিত ভাস্কর্য।

চার্চিল স্কয়ার

শহরের মূল প্রাণকেন্দ্র জ্যাস্পার এভিনিউ থেকে কিছুদূর হাঁটলেই চোখে পড়বে এক বিশাল খোলা জায়গা যেখানে কবুতরেরা বিচরণ করছে। খোলা স্থানটি ঠিক এডমন্টন পাব্লিক লাইব্রেরীর সামনে। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার উইন্সটন চার্চিলের নামে এই স্থানটির নামকরণ করা হয়েছে, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই খোলা স্থানে অনেক ফুলের গাছের সারি আপনার চোখে পড়বে, যা এখানকার পরিবেশকে রঙিন করে তুলেছে। একপাশে পাব্লিক লাইব্রেরি এবং এর অপর পাশে স্থাপিত হয়েছে এডমন্টন কমিউনিটি হল যা একটি মনোমুগ্ধকর স্থাপত্য কর্ম। দুটো পিরামিড আকৃতির ভবনের সমন্বয়ে নির্মিত হয়েছে এই কমিউনিটি হল যার একপাশে আছে একটি লম্বা মিনার এবং এর উপরে একটি বড় ঘড়ি ফিট করা আছে। পিরামিড আকৃতির স্থাপত্য দুটি সম্পূর্ণ কাঁচের তৈরি এবং সূর্যের আলোর প্রতিফলন এর সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলে। ওপেন স্কয়ারের ঠিক মাঝখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে যার সম্পর্কে আমার কোন সঠিক ধারণা নেই। তাছাড়াও এখানে আরও কয়েকটি স্ট্যাচু রয়েছে। এই ওপেন স্কয়ারের ঠিক নিচেই রয়েছে আন্ডারগ্রাউন্ড এল আরটি ট্রেইন স্টেশন এবং পূর্বপাশের রাস্তা পার হলেই চলে যাতে পারেন আলবার্তা আর্ট গ্যালারিতে । এখানে প্রায় সময়ে বিভিন্ন ওপেন সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য সময়ে এই স্থানটি প্রায় ফাঁকা অবস্থায় থাকে। অনেকেই এখানে ইভিনিং ওয়াক করতে আসেন। তাছাড়াও জ্যাস্পার এভিনিউতে অবস্থিত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীগণ অফিস ব্রেকে এখান থেকে ঘুরে যান। এখানে বিশ্রাম নেবার জন্য অনেকগুলো সিটিং বেঞ্চ রয়েছে। 

img_0988

চার্চিল স্কয়ার এবং এর সম্মুখে অবস্থিত সিটি হল।

আলবার্তা আর্ট গ্যালারি

যার চিত্রকর্ম পছন্দ করেন বা এতে আগ্রহ আছে তারা এখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন। এখানে বিভিন্ন প্রাচীন চিত্রকর্মের নিয়মিত প্রদর্শনী হয়। ১৯২৪ সালে স্থাপিত এই গ্যালারিতে প্রায় ৬০০০ এরও বেশি চিত্রকর্ম রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগ ১৯৫০ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে অংকিত চিত্রকর্ম। এখানে মূলত কানাডার বিমূর্ত চিত্রকর্ম এবং ভাস্কর্যের সমারোহ আছে যার বেশিরভাগই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আন্দোলনের প্রতীক। বাকি চিত্রকর্ম এবং ভাস্কর্যগুলো বিভিন্ন ইতিহাসের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে। এই আর্ট গ্যালারির ভবনটি যেন দেখতে একটি ভাস্কর্যের মত। এর স্থাপত্যকর্ম আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। বিভিন্ন সময়ে এখানে নতুন চিত্রকারদের চিত্রকর্ম নিয়ে বিভিন্ন আর্ট এক্সিবিশনও অনুষ্ঠিত হয় নিয়মিতভাবে।

img_0924

আলবার্তা আর্ট গ্যালারি ভবন।

DSC_2152

আর্ট গ্যালারির সংগ্রহ সমূহ।

আলবার্তা জাতীয় জাদুঘর 

আলবার্তা যাদুঘর (Royal Alberta Museum) পশ্চিম কানাডার বৃহত্তম সংগ্রহশালা এবং কানাডার শীর্ষ যাদুঘরগুলির মধ্যে একটি। ডাউনটাউন এডমন্টনের আর্টস ডিস্ট্রিক্টে অবস্থিত এই জাদুঘরে, আলবার্তার মানুষ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ, ঐতিহ্য সম্পর্কিত বস্তু এবং নমুনা সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখানে নানা রকম আর্কিওলজিক্যাল বিষয়বস্তু নিয়ে গবেষণাও করা হয়। এখানে এলে প্রায় ২৫ লাখ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানা যাবে। তাই পুরো মিউজিয়াম ঘুরে দেখতে হাতে সময় থাকা প্রয়োজন এবং পুরো ৪ লক্ষ ১৯ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গার ওপর নির্মিত এই জাদুঘর। তাই ইতিহাসপ্রেমীগণ চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে। 

museum

রয়েল আলবার্তা জাদুঘর।

107005169_10157658405672815_5974917455563186332_o

জাদুঘরের ভেতরের একটি দৃশ্য।

আলবার্তা এভিয়েশন জাদুঘর

এডমন্টন শহরের পুরানো এয়ারপোর্ট এলাকায় নির্মিত হয়েছে এই এভিয়েশন জাদুঘরটি। ২৫ বছর আগে জাদুঘরটি শুরু হয়েছিল, যখন বিমান বাহিনীর একদল কর্মকর্তারা এডমন্টন সিটি কাউন্সিলকে রাজি করিয়েছিলেন যেন তারা কিংসওয়েতে ঐতিহাসিক ব্লাচফোর্ড হ্যাঙ্গারটি ব্যবহার করতে দেয়। এটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুগের শেষ লম্বা ও প্রশস্ত হ্যাঙ্গার এবং এটি একটি সুরক্ষিত ঐতিহাসিক সম্পদ,  যেখান থেকে জাদুঘর তৈরির আরম্ভ হয়। এখানে প্রায় ২৩ টি পুরোনো বিমানের প্রদর্শনী নিয়মিত করা হয়, যার অধিকাংশই প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। বিমান ছাড়াও পুরানো বিমানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অংশবিশেষের প্রদর্শনীও এখানে নিয়মিত করা হয়। তাছাড়াও এখানে প্রায় ২ লক্ষাধিক যুদ্ধকালীন স্থীরচিত্র রয়েছে, যা গবেষকদের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করে। এখানে একটি গিফট শপ আছে যেখানে বিভিন্ন পুরানো যুদ্ধবিমানের ছোট ছোট রেপ্লিকা মডেল কিনতে পাওয়া যায়। যাদের এভিয়েশন বিষয়ে আগ্রহ আছে তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।

113172101_10158257503930310_2723746293912804702_o

আলবার্তা এভিয়েশন জাদুঘর এবং এর সংগ্রহশালা।

ফোর্ট এডমন্টন পার্ক 

ফোর্ট এডমন্টন পার্ক (“ফোর্ট এডমন্টন” হিসাবে পরিচিত) এডমন্টন শহরের একটি অন্যতম আকর্ষণ। এই পার্কটি অঞ্চল অনুযায়ী কানাডার বৃহত্তম জীবন্ত ইতিহাস জাদুঘর এবং এখানে এডমন্টনের ইতিহাসের প্রতিনিধিত্বকারী মূল এবং পুনর্নির্মিত ঐতিহাসিক কাঠামো উভয়ই রয়েছে। এই হেরিটেজ পার্কটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এডমন্টনের উত্তর সাসকাচোয়ান নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। ফোর্ট এডমন্টন পার্ক চারটি বিভাগ নিয়ে গঠিত, যা প্রায় ১৫৮ একর জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে আছে এবং এর প্রতিটি বিভাগই ভিন্ন ভিন্ন যুগের ইতিহাসের প্রতিনিধিত্ব করে। দর্শনার্থীরা পার্কের প্রবেশ পথে সম্পূর্ণ কার্যকরী বাষ্প ট্রেনে উঠতে পারে যা পার্কের দৈর্ঘ্য পেরিয়ে দুর্গে পৌঁছে দেয়, সেখান থেকে তারা পায়ে হেঁটে এগিয়ে যায় এবং চারটি যুগ ঘুরে অযৌক্তিকভাবে সময়ের সাথে এগিয়ে যায়। ট্রেনটি বাদ দিয়ে দর্শনার্থীরা উপযুক্ত যুগে ঘোড়া টানা গাড়ি, স্ট্রিটকার এবং অটোমোবাইলও চালাতে পারেন। ট্রেনে চলাচল এবং স্ট্রিটকারগুলি ভর্তি সহ বিনামূল্যে; তবে ঘোড়ায় টানা গাড়িগুলিতে চড়ার জন্য সাধারণত পারিশ্রমিকের প্রয়োজন হয় এবং অটোমোবাইলগুলিতে চলাচলকারী দর্শনার্থীরা পার্ক কর্মীদের বিবেচনার ভিত্তিতে চালাতে পারেন। পুরো পার্কটি ঘুরে দেখতে কমপক্ষে অর্ধেকদিন হাতে রাখা প্রয়োজন। বর্তমানে এই পার্কটি ৬ মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং এখানে সংস্কারের কাজ অব্যাহত রয়েছে।

ফোর্ট এডমন্টন পার্কের কিছু দৃশ্য। 

উপরে বর্ণিত স্থানসমূহ ছাড়াও ঘুরে আস যেতে পারে টেলাস সাইন্স ওয়ার্ল্ড (শিশুদের জন্য বিশেষ জায়গা), এল্ক আইল্যান্ড ন্যশনাল পার্ক (যা মূল শহর থেকে খানিকটা দূরে), মিউট্রাট কন্সারভেটরি ( একটি বোটানিক্যাল গার্ডেনের ন্যায়) ইত্যাদি। ওয়েষ্ট এডমন্টন মল ছাড়াও শহরের ভেতরে শপিং এর জন্য যাওয়া যেতে পারে কিংসওয়ে মল এবং সিটি সেন্টার মলে।

https://telusworldofscienceedmonton.ca/media/images/Panorama1.2e16d0ba.fill-1920x1080.jpg

টেলাস সাইন্স ওয়ার্ল্ড।

https://assets.exploreedmonton.com/images/_1200x675_crop_center-center_none/Edmonton_Elk-Island_Bison-on-the-road_2013.jpg?mtime=20180927215732&focal=none

এল্ক আইল্যান্ড ন্যশনাল পার্ক।

img_1052

সিটি সেন্টার মল।

শহরের যাতায়াত ব্যবস্থা 

আগেই বলেছি যে, এখানকার বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের ব্যাক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে থাকেন নিয়মিত যাতায়াতের জন্য। কিন্তু পাব্লিক ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম কিন্তু এতটা খারাপ নয়। এখানে দু ধরণের পাব্লিক ট্রানজিট সিস্টেম রয়েছে। একটি হল ইটিএস বাস এবং অন্যটি ইটিএস এলআরটি। ইটিএস পাব্লিক বাস সার্ভিসে প্রায় ৩৯৯ টি রুট আছে। তাই বাসে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজেই যাতায়াত সম্ভব। তবে মাঝে মাঝে এক স্থান হতে অন্য স্থানে যেতে বাস বদল করতে হয়। এলআরটি ট্রেন ট্রানজিট সিস্টেমে দুটো রুট আছে। একটি ক্যাপিটাল লাইন রুট এবং অন্যটি মেট্রো লাইন রুট। দুটো রুটই শহরের এক প্রান্তকে অন্য প্রান্তর সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। এই বাস কিংবা ট্রেনে চড়তে হলে আপনার ট্রানজিট পাসের প্রয়োজন হবে। সাধারণত ১১০ ডলারের বিনিময়ে মাসিক ট্রানজিট পাস পাওয়া যায় যার মেয়াদ ঠিক ঐ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই পাস থাকলে বাস বা ট্রেনে যত ইচ্ছা ততবার যাতায়াত করতে পারবেন। যদি না থাকে তবে, আপনাকে প্রতিবার যাতায়াতের জন্যে সাড়ে তিন ডলার খরচ করতে হবে। অন্যান্য শহরের মত এখানেও ট্যাক্সিক্যাবের চলাচল যথেষ্ট। তবে ট্যাক্সির চেয়ে উবারে যাতায়াত করা বেশী সাশ্রয়ী হবে।

img_1106

ইটিএস বাস সার্ভিস। 

এডমন্টন শহরে তেমন কোন আকর্ষনীয় পর্যটনকেন্দ্র না থাকলেও শহর হিসেবে খুব একটা খারাপ শহর নয় এটি। এখানকার সকলের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত বিশ্বের অন্যান্য পরিচিত শহরগুলো থেকে। এবং এত বড় একটা শহরে জনসংখ্যা কম হবার জন্য একে অনেক শান্ত-শিষ্ট মনে হয়। তাই শহরপ্রেমীদের নিকট এটা একটা ভাল লাগার শহর হতে পারে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এই শহর আমি ভাল করে ঘুরতে পারিনি। কিন্তু আমার ইচ্ছা আছে আবার এখানে আসার। এই শহর সবসময়ে আমার কাছে চির-স্মরণীয় হয়ে থাকবে। 

  এখনও এটা বলতে পারছি না যে, “Travel more & be happy. Always remember that your mobility is your freedom.”। যদিও বিশ্বের কিছু জায়গা এখন নিরাপদ, তবে কোন জায়গায় এখনও এই মহামারির প্রকোপ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। অনেককেই দেখা যাচ্ছে সাবধানতা অবলম্বন করে ঘুরে বেড়াতে, তবে আপনি এটা করবার আগে ভালভাবে ভেবে নিন। সবাই ভাল থাকবেন ও সুস্থ থাকবেন এবং নিজ নিজ অবস্থানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখবেন।

ছবিসূত্র – নিজস্ব ধারণকৃত এবং সংগৃহীত।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s