আপনারা সবাই জানেন যে, সারা দুনিয়া করোনা ভাইরাসের প্রকোপে আক্রান্ত। এটা বলতে গেলে ভয়াবহ একটা মহামারির আকার ধারণ করেছে বলা চলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনেক আগেই একে আনুষ্ঠানিকভাবে এক মহামারি বলে ঘোষণা করেছে। করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা এখন সমস্ত দুনিয়াতে বিদ্যমান। এর উৎপত্তি স্থল চীন থেকে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়ে সমস্ত মহাদেশে ইহা এখন প্রাণনাশের আতংক ছড়াচ্ছে। নতুন করে কিছুই বলার নেই, আপনারা সবাই তা জানেন। যেহেতু এই রোগের ভ্যাকসিন এখনও পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি, তাই এ রোগের এখন পর্যন্ত প্রতিকার হল সোশাল ডিস্টেনসিং অর্থাৎ পরস্পরের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা। যার ফলে, একের পর এক শহর এবং অঞ্চল লকডাউন হচ্ছে। সব ধরণের জনসমাগম এখন পুরোপুরিভাবে বন্ধ বিশ্বের প্রায় সকল স্থানে। মানুষের এক স্থান হতে অন্য স্থানে যাতায়াত একেবারেই কমে গিয়েছে। যার জন্য পর্যটন শিল্প খাতে সকল দেশে বিশাল পরিমানে লোকসান হচ্ছে। মহামারি ছড়িয়ে যাবার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিদিন প্রায় বিলিয়ন ডলারেরও বেশি লোকসান হচ্ছে। বিপাকে পড়েছেন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর দরিদ্র এবং গৃহহীন লোকেরা। আমদানী ও রপ্তানি বাণিজ্যেরও পতন হচ্ছে প্রতিদিন। আর এভাবে চলতে থাকলে সমগ্র বিশ্বে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে।
কোভিড-১৯ মহামারির বর্তমান পরিস্থিতি এবং ডাক্তার এবং ফ্রন্টলাইন কর্মীদের মহানুভবতার কার্টুনচিত্র। অঙ্কন করেছেন – আলী রেজা( https://www.instagram.com/alirezapakdel_artist/ ) ।
তবে সব কিছুর মন্দের মধ্যেও কিছু জিনিস ঘটছে এই বিশ্বে যা খুবই ইতিবাচক। যেমন সারা বিশ্বে বায়ু দূষণের হার কমে গিয়েছে। প্রাকৃতিক বনাঞ্চলগুলো আবার নিজেদের মেলে ধরতে শুরু করেছে। প্রাণীকূলে স্বস্তি এসেছে। বিশ্বে কিছু কিছু জায়গায় মানবিকতার নতুন নতুন উদাহরণ তৈরি হচ্ছে এবং নানান কিছু যা এক মনে চিন্তা করলে খুবই ইতিবাচক। হয়তো কিছুদিন পর এই মহামারির প্রকোপ একেবারেই থাকবে না। সারা বিশ্ব তখন আবার মানুষের কোলাহলে আবার পূর্ণ হবে। সবাই নিজ নিজ কাজে ফিরে যাবে। কিন্তু আমাদের এইসকল ইতিবাচক কর্মকান্ডকে ভুলে গেলে একেবারেই চলবে না। কারণ এগুলো থেকে আমাদের সবাইকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নিজেদের নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে। গড়ে তুলতে হবে নতুন এক বিশ্ব। আজ কথা হবে সেসকল কিছু পরিবর্তনের গল্প নিয়ে।
যেভাবে বদলে যাচ্ছে আমাদের চারপাশ
বিভিন্ন শহর এবং বিভিন্ন স্থানে লকডাউনের ফলে মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। সেসকল স্থানে মুদির দোকান এবং ফার্মেসী ছাড়া সকল কিছুই বন্ধ। মানুষ সবাই এখন যার যার গৃহে অবস্থান করছেন। যার ফলশ্রুতিতে, পরিবেশ যেন এক রূপ পেয়েছে। আমি বাংলাদেশের কথা দিয়েই প্রথমে শুরু করবো। কিছুদিন আগে একটা সংবাদে দেখলাম যে, রাজধানী ঢাকার আবহাওয়ার মান অনেকটা উন্নিত হয়েছে। আমরা সকলেই জানি যে, আমাদের দেশের রাজধানী ঢাকার আবহাওয়ার মান আসলে কতটা খারাপ ছিল। ঢাকার মান র্যাংকিং এ সর্বনিম্ন ছিল। তাই যতটা উন্নতি হয়েছে সেই লকডাউনের পর থেকেই। ঢাকা থেকে চলে যাব প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজারে যা আমাদের দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। লকডাউনের ফলে সেখানে পর্যটক সমাগম শূন্য। যেদিন থেকেই পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধ হয়ে যায়, তার কিছুদিন পর থেকেই সমুদ্রে ডলফিনদের অবাধ বিচরণের খবর শুনতে পাওয়া যায়। তার কিছুদিন পর খবর পাওয়া গেল যে, পর্যটকশূণ্য সমুদ্র সৈকতে সাগরলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে সবুজের জাল। আর এ জালে রাশি রাশি বালুরাশি আটকে সৃষ্টি হচ্ছে বালিয়াড়ি। বালিয়াড়িকে সাধারণত সমুদ্র সৈকতের রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ সাগরে ঝড়-তুফান বা ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসকে ঠেকিয়ে রাখে বলে। অথচ পর্যটন শিল্পের কারণে দখল ও দূষণের শিকার হয়ে গত প্রায় ৩ দশকে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রসৈকতের বড় বালিয়াড়িগুলো প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। এখন সেই বিধ্বস্ত প্রকৃতি আপনাআপনি পুনর্গঠিত হচ্ছে নির্জনতার সুযোগে। সেখানে শামুক ও ঝিনুকের দেখা মিলছে অগণিত। সমুদ্র সৈকতের কিছু কিছু স্থানে লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণও লক্ষ্য করা যাচ্ছে স্থানীয় এলাকাবাসীদের মতে। লাল কাঁকড়ার জন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত অতটা বিখ্যাত না হলেও, এদেশের আরেকটি সমুদ্র সৈকত বরিশাল বিভাগের কুয়াকাটা অনেক বেশি বিখ্যাত। সেখানে সমুদ্র সৈকতের নির্দিষ্ট পয়েন্টে দিনের এক নির্দিষ্ট বেলায় লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ দেখা যেত যা পর্যটকদের খুবই আকৃষ্ট করতো। কিন্তু এখন লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ দিনের সবসময়ে বিদ্যমান। স্থানীয় এলাকাবাসীদের মতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এখন লাল চাদরে ঢাকা পড়েছে। সুন্দরবনের যেসকল স্থানে আগে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি ছিল, এখন সেসব স্থানে হাজার হাজার হরিণদের পদচারনণা দেখা যাচ্ছে। নোয়াখালি জেলার হাতিয়া দ্বীপেও, এধরণের ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও গণপরিবহন ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকায় এদেশের বায়ুমণ্ডলে কার্বন কন্সাম্পশনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। যার কারণে, এদেশের খোলা আকাশে পাখিদের বিচরণ আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এদেশের শহরগুলোতে আগে যেসকল পাখির ডাক শোনা যেত যা প্রায় অনেকদিন যাবত বন্ধ ছিল তা এখন আবার শুনতে পাওয়া যায়।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সাগরলতার সবুজ জাল, ঝিনুকের ছড়াছড়ি এবং কাঁকড়ার বিচরণ।
সুন্দরবনের কটকা সমুদ্র সৈকতের পাশে একদল হরিণ।
দ্যা ডেইলি স্টারের খবরে কুয়াকাটার চিত্র।
এখন আসা যাক বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। আমরা সকলেই জানি যে, ইউরোপের দেশ ইতালির অবস্থা সম্পর্কে। যা সমগ্র ইউরোপে মহামারি ছড়ানোর কেন্দ্রবিন্দু ছিল। যেখানে প্রায় এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার জন লোকের মৃত্যু ঘটেছে। সেখানকার জনজীবন এখন বিপর্যস্ত বললেই চলে। কিন্তু এত কিছুর পরেও সেখানে কিছু ইতিবাচক ঘটনা ঘটেছে যা সেখানকার পরিবেশবাদীদের মনে কিছুটা স্বস্তি এনেছে। যার মাঝে একটি হল যে, ভেনিসের লেক বা খালের পানি অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন তুলনামূলকভাবে বেশি পরিষ্কার। এবং এখানে ছোট জলজ প্রানীদের অস্তিত্বের দেখা মিলেছে এখন যা কয়েক দশক ধরে অনুপস্থিত ছিল। ভেনিসের খালগুলোতে দূষণের মাত্রা এতই বেশি ছিল, সবাই ধারণা করেছিল যে এখানে আর কোন জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব হয়তো নেই। এটা সকলেরই জানা যে, ভেনিস হল ইউরোপের এক অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র এবং এখানে প্রায় সবসময় প্রচুর পর্যটকদের আনাগোনা হয়। এবং খালের মধ্যে দিয়ে চলা ছোট ছোট গন্ডোলা বা ইঞ্জিন চালিত নৌকাই এখানকার পরিবহনের মাধ্যম। এবং এসকল নৌযান দ্বারাই খালের পানি বেশি দূষিত হয়। কিন্তু এখন চলাচলও বন্ধ এবং দূষণের মাত্রাও খুবই কম। রোম এবং মিলান শহরে অনেক পাখির আগমণ ঘটেছে, যেগুলো পাখি এসময়ে সাধারণত অত্র এলাকায় বিরাজমান করে না। এগুলো সাধারণত অন্য এলাকাগুলোতে বিশেষ করে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বিরাজ করে। প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের সামনের পার্কেও নানান প্রজাতির পাখিদের আগমন ঘটেছে এবং কাঠবেড়ালীরা দলে দলে এসে এক গাছ হতে অন্য গাছে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহর লোকজনহীন হয়ে পড়ায়, সেখানে ক্যাংগারুদের বিচরণ দেখা যাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোতে বন্য হরিণদের চলাচল দৃশ্যমান হচ্ছে। শ্রীলংকার বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে কচ্ছপদের আনাগোনা আগের চেয়ে অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। এমনকি বিবিসির এক প্রতিবেদনে দেখা গেল যে, দক্ষিন আমেরিকার দেশ চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে খালি এক রাস্তায় এক নেকড়ে বাঘ বা ঐ জাতীয় কোন প্রাণী অবাধে ঘোরাফেরা করছে এবং এক বাসার আঙিনা হতে অন্য বাসার আঙিনায় পায়চারি করছে। এসকল পশু-পাখিদের অবাধ চলাচল এটাই প্রমাণ করে যে, ওদের বিরুদ্ধে আমরা বুঝে না বুঝে কত না অন্যায় করেছি। বনজঙ্গল উজার করে দিয়ে নিজেদের দালান-কোঠা অট্টালিকা বানিয়েছি। তাদের অবাধে শিকার করেছি। তাদের পরিবেশ দূষিত করেছি। আর এখন প্রকৃতি আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে।
ইতালির ভেনিসের বর্তমান চিত্র।
অস্ট্রেলিয়ার রাস্তায় এরকম বিরল প্রজাতির প্রাণীদের আগমন।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে দেখুন বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন শহরের চিত্র।
তবে এসবকিছু সম্পর্কে যা কিছুই বলি না কেন, এটা ঠিক প্রকৃতি নিজেকে ঠিক করে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পাচ্ছে যা পরিবেশবাদীদের ঐক্যমত অনুযায়ী একদম স্পষ্ট। তাদের মতে সকল মানুষকে তার নিজ নিজ পরিবেশের প্রতি আরো বেশি সদয় হতে হবে এবং মানবিক আচরণ করতে হবে।
মানবিকতার নতুন দৃষ্টান্তসমূহ
করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুধুমাত্র আমাদের চারপাশের পরিবেশকেই বদলে দেয়নি। এই মহামারি কারো কারো মধ্যে এনেছে দৃষ্টান্তমূলক মানবিক পরিবর্তন। আমরা যেরকম জানছি বন্য প্রানীদের অবাধ বিচরণ সম্পর্কে তেমনি জানছি রাস্তার সচরাচর বিচরণ করা প্রানীকূল যেমন কুকুর, বিড়াল, বানর যারা আমাদের পরিবেশে আমাদের সাথেই বসবাস করে তাদের দুর্দশার কথা। যাদের খাদ্যের যোগান হত আমাদেরই ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট খাবারের মাধ্যমে, মানুষ বের না হওয়াতে তাদের এখন অভুক্ত থাকতে হচ্ছে বেশীরভাগ সময়। সব মানুষেরাও এখন এব্যাপারে কিছুটা নিরুপায় হয়ে পড়েছে। তাদের মন কাঁদলেও সেরকম কিছুর করবার নেই নানাবিধ বাধার কারণে।
অসহায় হয়ে পড়েছে রাস্তার অবলা প্রাণীরা এবং পথশিশুরা। কার্টুনচিত্র।
তবে বিভিন্ন দেশের প্রশাসন তাদের ক্ষমতার সুব্যবহার করে এসকল সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসছে। এবং এসকল সংবাদ এই মুহূর্তে খুব একটা হাইলাইট না হলেও এগুলো মানবিকতার নতুন দৃষ্টান্তসমূহ স্থাপন করছে এই সভ্যতায়। যেমন থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক যখন লকডাউন হল তার কিছুদিন পর ব্যাংককের রাস্তায় ঝাঁকে ঝাঁকে বানরের দল আসতে শুরু করে এবং তারা এদিক থেক ওদিকে ছোটাছুটি করতে থাকে খাদ্যের সন্ধানে। কারণ এতদিন তারা মানুষের দেওয়া খাদ্য গ্রহন করে আসছিল। এই সমস্যা উত্তরণে ব্যাংকক পুলিশ এগিয়ে আসলো। তারা সেই অভুক্ত বাদরের দলকে খাবার দেওয়া শুরু করলো। শহরবাসীও এগিয়ে আসলো তাদের সাথে। সকলে যার যার ছাদে বিভিন্ন খাবার রাখতে শুরু করলো যাতে বাদরেরা খাবারগুলো সংগ্রহ করতে পারে। তুরস্কের প্রধান শহর ইস্তাম্বুলে প্রায় দেড় লাখ বিড়াল এবং প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার কুকুর রাস্তায় বিভিন্ন পথে পথে বাস করে এবং প্রত্যেক ইস্তাম্বুলবাসীর সকলেই তাদের নিজ উদ্যোগে তাদের খাদ্যের যোগান দেয়। কিন্তু লকডাউনের ফলে কেউ বাহিরে না বের হতে পারায় সেই পশুগুলো এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। তাই শহরবাসী সোশাল মিডিয়াতে একটি ক্যাম্পেইন শুরু করে এবং তাতে সারা দেন তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সুলেমান সয়লু। তার উদ্যোগের ফলে এখন তুরস্কের বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেসকল কুকুর-বিড়ালদের খাবার সরবরাহ করছে। তারা বিভিন্ন স্থানে একটি নির্দিষ্ট বড় পাত্রে খাবার সরবরাহ করছেন এবং নিয়মিত এই পাত্রগুলোকে সেনিটাইজ করার কাজও করে যাচ্ছেন। তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সুলেমান সয়লুর মতে “আমরা আমাদের বন্ধুদের সাথেই আছি যাদের সাথে আমরা রোজ চলাচল করি। আমরা তাদের ভুলে যাইনি।” বিশ্ব মিডিয়াতে এই উদ্যোগ অনেক প্রশংসা কুরিয়েছে।
বিবিসির খবরে তুরস্কের সরকারের প্রাণীদের প্রতি উদ্যোগ।
শুধু প্রাণীকূলে নয়। মানুষে মানুষে সহযোগিতা করবার দৃষ্টান্তও অনেক জায়গাতে দেখা গিয়েছে। স্পেন ও কানাডাতে গৃহহীন মানুষদের জন্য বিভিন্ন আশ্রয়স্থল খোলা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়, তেমনি তাদের খাদ্যের সরবরাহ করছে সাধারণ মানুষ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনদের সহায়তায়। ব্রিটেনে বিভিন্ন কমিউনিটির লোকজন গৃহহীন মানুষদের খাদ্য সরবরাহ করছে। তাদের জরুরী ঔষধের যোগানও তারা দিচ্ছে। অনেকে নিজেদের গাড়ি দান করেছেন বিভিন্ন হাসপাতালে যাতে ডাক্তারেরা ঠিকমত আসা যাওয়া করতে পারেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পুলিশেরা বিভিন্ন আবাসিক এলাকার রাস্তায় নেচে গেয়ে এলাকাবাসীদের বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডাক্তার ও নার্সরা যা করছেন সেটা উল্লেখ করে তাদের ছোট না করাই ভাল। বিশ্ববাসীরা যে এখন সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ তাদের কাছেই।
আমাদের দেশে সবকিছুই এখন একটা উল্টোচিত্রের মত। ডাক্তার ও নার্সরা কর্মবিরতি দিয়ে হাসপাতালগুলোকে বন্ধ করে রেখেছেন। সরকার প্রান্তিক মানুষদের জন্য যে রেশন বরাদ্দ করেছে, তা এক কুচক্রী মহল নিয়মিত আত্মসাত করছে। মানুষের মাঝে সচেতনতার অভাব। তবে এত উল্টোচিত্রের মাঝেও অনেকগুলো ভাল কাজ এখনও হচ্ছে যা হয়তো সবার চোখের আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কথা না বললেই নয়। তাদের স্বেচ্ছাসেবকগণ এই ক্রান্তিলগ্নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা নিজেদের উদ্যোগে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থান জীবানুমুক্তকরণের কাজ করে যাচ্ছেন। প্রান্তিক মানুষদের জন্য তারা নিয়মিত খাবার এবং বাজার সদাই সরবরাহ করছেন।দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনও এসময় বিভিন্ন স্থানে জনগনকে সাহায্য করে যাচ্ছেন, বিশেষ করে লকডাউনকৃত বাসাগুলোতে প্রয়োজনীয় বাজার সদাই এবং ঔষধ সরবরাহ করছেন। সংখ্যায় স্বল্প হলেও আমাদের দেশের ডাক্তার এবং নার্সরা তাদের সর্বসামর্থ্য অনুযায়ী মানুষদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আবার কিছু ইন্টার্ন তরুণ চিকিৎসকগণ হাস্পাতাল বন্ধ থাকলেও নিজ উদ্যোগে রাস্তায় নেমে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা কেন্দ্র চালাচ্ছেন বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে। তারা রাস্তায় সাধারণ জনগণের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনদেরও নিয়মিত তদারকি করছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা রোগীদের লাশ দাফনে নিয়মিত সহায়তা করছে মারকাজুল-ইসলাম নামে একটি সংস্থা। এছাড়া এই ক্রান্তি লগ্নে অন্যান্য অনেক ইমাম ও আলেমগণ মৃত্যুর পর শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে নিজেদের নিয়োজিত করছে।
রাস্তার অবলা প্রাণীদের কথা চিন্তা করে অনেক সংস্থা এগিয়ে আসছে তাদের দেখভাল করবার জন্য। তারা রাস্তার কুকুর বিড়ালদের যতটুকু সম্ভব খাওয়া দেওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকে নিজ উদ্যোগে এটা করছেন যখন তারা অতি প্রয়োজনে বাসার বাহির থেকে বের হচ্ছেন। কিছুদিন আগে দৈনিক প্রথম আলোতে খবর এলো যে, রাজবাড়ি জেলার পুলিশ সুপার প্রশাসনিক উদ্যোগে জেলা সদরের রাস্তার কুকুরগুলোকে খাবার দিচ্ছেন। প্রথম আলোকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন যে, এই অবলা প্রাণীগুলো বলতে পারে না যে তাদের খুবই ক্ষুধা লেগেছে দুইটা বিস্কুট দিয়ে যান। তাই আমাদের এই উদ্যোগ গ্রহণ করা। এই সকল সংবাদ এখনও প্রমাণ করে যে, এই দেশে মানবতা এখনও ফুরিয়ে যায়নি।
অবলা প্রাণীদের প্রতি ভালবাসার নিদর্শন।
উপরের এসকল দৃষ্টান্ত আমাদের ইংগিত দিচ্ছে বদলে যাবার এবং ইংগিত দিচ্ছে আমাদের জীবনযাত্রার ধরণ বদলে ফেলবার যদি আমরা আগামীতে একটি সুন্দর পৃথিবীতে বসবাস করতে চাই।
যেভাবে বদলাতে হবে আমাদের সবাইকে
দিন পর দিন অতিক্রমের সাথে সাথে হয়তো এই ভাইরাসের প্রকোপও শেষ হয়ে যাবে অথবা কোন শক্তিশালী ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়ে যাবে। যার ফলে হয়তো কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে এই ভয়াবহ মহামারি। আমরাও হয়তো ফিরে যাব আমাদের আগের জীবনে। কিন্তু আমাদের ফিরতে হবে অনেক পরিবর্তিত হয়ে এবং এতদিনে যেসকল ভাল অভ্যাসগুলো রপ্ত করেছি সেগুলো ভূলে গেলে চলবে না। নিজেদের নিয়ে চিন্তা ছাড়াও আমাদের আশেপাশের পরিবেশের প্রতি আরও বেশি সদয় এবং যত্নবান হতে হবে।
শুরুতেই আমাদেরকে আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। যত সম্ভব মুখরোচক খাবার পরিত্যাগ করে পুষ্টিকর খাবারের দিকে ঝুঁকতে হবে। আমরা কোন কিছু গ্রহণের আগে ভাবি না যে, আমাদের সেই খাবারে পুষ্টিকর গুনাগুন কি কি আছে। আবার কিছু কিছু মুখরোচক খাবারের জন্য আমরা দূর দূরান্তে ভ্রমণ করে থাকি। যেমন আমাদের দেশের মানুষদের কক্সবাজার বা কুয়াকাটা গেলে কাঁকড়া বা অক্টোপাসের মাংস খেতেই হবে। কক্সবাজার বা কুয়াকাটা গিয়ে আমরা কোথায় ঘুরবো না ঘুরবো পরের কথা কিন্তু কাঁকড়া বা অক্টোপাস আমাদের খেতেই হবে। এখন প্রশ্ন হল এই যে, এগুলো না খেলে কি আমরা মারা যাব না আমাদের মধ্যে খাদ্যাভাব দেখা দিবে? তাহলে এসব খেয়ে বিচিত্র প্রাণীকূলকে হুমকির মুখে ফেলার দরকার কি? এমন তো নয় যে কাঁকড়া চিংড়ীর মত বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ হয়। অনেকে আবার সুন্দরবন বা এদেশের পাহাড়ী অঞ্চলগুলোতে যায় হরিণের মাংস, বন্য গরুর মাংস খেতে। কেন আমরা এ ধরণের বিরল প্রজাতির প্রাণীর মাংস খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করবো বা করতে হবে?
শুধু বাংলাদেশকে বিচার করলে খুবই ভুল হবে। বাংলাদেশের বাহিরে বা উপমহাদেশের বাহিরের দেশগুলোতে মানুষদের খাদ্যাভ্যাস আরও বেশি বাজে। বিশেষ করে চীন এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। চীন এবং ভিয়েতনামে কুকুর, বিড়াল, বাদুর, সাপ, ব্যাঙ, কচ্ছপ এবং এমন কোন প্রাণী নেই যেটাকে খাদ্য হিসেবে খাওয়া হয় না। পশ্চিমা দেশগুলোতে এসকল প্রাণীর মাংস খাবার হিসেবে গ্রহণ করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু পশ্চিমারা যখন সেসকল দেশগুলোতে ভ্রমণ করতে যান তখন তারা আগ্রহ সহকারে সেগুলোকে খেয়ে দেখন এবং এগুলোর বেচা বিক্রিও ভাল হয়। আমাদের মানুষদের ধর্মীয় অনুশাসন এগুলোর জন্য অনেক বড় বাঁধা। কিন্তু ধর্মীয় অনুশাসনের বেড়াজাল না থাকলে আমরা এগুলো হতে পিছপা হতাম না। আমাদেরকে বুঝতে হবে এখন এই মুহূর্তে যেই ভাইরাসের প্রকোপ চলছে, সেটা এসেছে বাদুর বা অন্য কোন প্রাণী হতে। চীনের উহান শহরে যখন সংক্রমণ প্রবল আকারে ছড়াতে শুরু করে তখন সরকার এক তদন্ত শুরু করে এবং তারা উহানের এক সামুদ্রিক ফুড মার্কেটের সম্পৃক্ততা এর সাথে পান। ঐ মার্কেটে বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী ছাড়াও, বাদুরের মাংস বিক্রি হত। বাদুর ছাড়াও সেখানে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী পাওয়া যেত যা চোরাচালানের মাধ্যমে চীনে পাচার হত এবং চীনা লোকদের কাছে তা খাদ্য হিসেবে খুবই জনপ্রিয় ছিল। হংকং এর রিসার্চ গবেষক ড. গ্যাব্রিয়েল লিওন বলেন যে, এটা শতভাগ নিশ্চিত এই ভাইরাস অন্য কোন প্রাণী হতে এসেছে।তিনি আরও বলেন যে, যতক্ষণ না পর্যন্ত এই ভাইরাস কোন প্রাণী হতে মানুষে সংক্রমিত হয়েছে তা না জানা যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এর ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করা কঠিন হয়ে পরবে। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি অফ গ্লোবাল পাব্লিক হেলথ এর গবেষক ও প্রফেসর এলোডি গেডিনের মতে, করোনা ভাইরাস হল সার্স ভাইরাসের বংশধর এবং সার্স ভাইরাস হল এক ধরণের ব্যাট ভাইরাস বা বাদুর সংক্রামিত ভাইরাস। তাই তিনি শতভাগ নিশ্চিত যে, এই ভাইরাসের উৎপত্তি বাদুর থেকেই এবং বাদুর থেকেই এর সংক্রমণ।
তাই আমাদের খাদ্যাভ্যাস এখনই পরিবর্তন করতে হবে। উল্টোপাল্টা পশুর মাংসকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হতে বিরত থাকতে হবে। পাশপাশি নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করার অভ্যাসও পরিত্যাগ করতে হবে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সবকিছুতেই আমাদের পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে যে, আমাদের পরিবেশ সুস্থ থাকলেই আমরা সুস্থ থাকবো। এই সময়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী, পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক কমে গিয়েছে। যার জন্য এই মহামারিতে অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা হল যে, মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অনেক বেশি কার্যকর করে তোলা। এই মুহূর্তে আমরা আমাদের শরীর স্বাস্থ ঠিক রাখার জন্যে অনেক কিছু করছি। আমাদের সেই অভ্যাসগুলোকে সর্বদা চালু রাখতে হবে। এবং আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে বা প্রতিটি সিদ্ধান্তে আমাদেরকে আগে পরিবেশের কথা চিন্তা করতে হবে। আমরা যেই বাড়িতে থাকি সেটা পরিবেশ বান্ধব কিনা, আমরা যেই গাড়ি ব্যবহার করছি সেটার কার্বন নির্গমন কতটুকু, আমরা যেই ব্যাগ বা ওয়ালেট ব্যবহার করছি সেটা সেটা বিরল প্রজাতির কোন প্রাণীর চামড়া দ্বারা তৈরি কিনা এ স্কল ব্যাপারে আমাদের চিন্তা করতে হবে। সবকিছুতেই আর্থ-বাণিজ্যিক চিন্তা করলে হবে না। কারণ, যখন একটা পরিস্থিতি এমনই প্রতিকূল থাকে যে, অঢেল টাকা পয়সাতেও কোন কাজ হয়না। করোনা ভাইরাসের প্রভাব তারই উদাহরণ।
ইদানিং বিশ্বের অনেক সংস্থা ”ওয়ার্ক ফ্রম হোম” বা ঘরে বসে সকল দাপ্তরিক কাজ চালু রাখার বিভিন্ন পদ্ধতি বের করেছে। যার ফলে মানুষকে এখন কাজের প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে না। বিশ্বে বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে এই ধরণের পদ্ধতির উদ্ভাবন হয়ে থাকে। তবে যখন এই মহামারির প্রকোপ চলে যাবে তখনও এই ”ওয়ার্ক ফ্রম হোম” পদ্ধতিটিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিভাবে এর বিস্তার ঘটানো যায় সবার সেই চিন্তা করা উচিত। ব্যাপারটা ভেবে দেখার মত যে, এমনটা যদি হয় তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নতুন বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে। যার ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ অপচয়ের পরিমাণ অনেক কমে যাবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য সঠিকভাবে বজায় থাকবে। আজকাল যেভাবে প্রযুক্তির প্রসার ঘটছে, ভবিষ্যতে এমনটা দেখবার সুযোগ আমাদের অনেক বেশি।
আমরা যখন এক স্থান হতে অন্য স্থানে যাব বা ভ্রমণ করবো, তখন আমাদের অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। কোন স্থান দর্শনের ফলে যদি সেখানকার প্রকৃতি বা প্রাণিকূলের ভারসাম্য নষ্ট হয় তবে সেখানে না যাওয়াটাই ভাল। যেমন গহীন জঙ্গলে ক্যাম্প করে রাত্রিযাপন করা এরকম কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি কোথাও যেত হয় তবে, সেখানকার পরিবেশের কথা মাথায় রাখতে হবে। বিশেষ করে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে। কোথাও ঘুরতে গেলে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা উচিত নয়। কোন স্থানে ভ্রমণকালে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র যত সম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র সব ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে এবং একে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যেসকল স্থানে হেঁটে যাওয়া সম্ভব সেখানে গাড়ি ব্যবহার করা হতে বিরত থাকতে হবে। ময়লা আবর্জনা সবসময় নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। যেসকল দেশে বা অঞ্চলে আমরা বেড়াতে যাব সেসকল জায়গার সংস্কৃতি ও আচার-ব্যবহার সম্পর্কে আগে জেনে নেওয়া উচিত এবং সেগুলোর ওপর শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। কোন স্থানের সংস্কৃতি যদি প্রকৃতি এবং পরিবেশ বিরুদ্ধ হয় তবে সেখানে গমন না করাই শ্রেয়। পাশাপাশি অন্য সবাইকেও সেখানে যাবার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করতে হবে এবং এর বিরুদ্ধে বৈশ্বিক প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন খাদ্যাভ্যাস রয়েছে। যেমন মধ্য এশিয়ার লোকজন ঘোড়ার মাংস খায়, আরবের লোকজন উটের মাংস খায় যা খাওয়া খারাপ কোন কিছু নয়। যদি আমাদের দেশের কথা বলি তবে এদেশের মানুষ এগুলো খেয়ে অভ্যস্ত নয়। তাই অভ্যস্ত হওয়াও উচিত নয়। কারণ, অন্য কোন দেশকে দেখে সেই ট্রেন্ড নিজেদের দেশে নিয়ে আসা একেবারেই উচিত নয়। এতে প্রাণীকূলের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। মোটকথা যে, এক দেশের ট্রেন্ড অন্য দেশের কপি না করাই ভাল, এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
আর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যেটা হল, আমাদের মাঝে যে মানবিকতা বা মানবিকতাবোধের ঘাটতি আছে তা পূরণ করতে হবে এবং মানবিকতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ্বের সকল মানুষদের উচিত নিজেদের ভিন্নতার দিকে আলোকপাত কম করে মানবতার খাতিরে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামীতে সবার জন্য এক সুন্দর বিশ্ব গড়ে তোলা। এখন এই ক্রান্তিলগ্নে যেই মানবতার দৃষ্টান্তগুলো আমরা দেখছি, তা থেকে আমাদের নিজেদের উজ্জীবিত করে একে অন্যের পাশে দাঁড়িয়ে সুন্দর এক পৃথিবী আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যাওয়া। এসকল ক্ষেত্রে বিশ্বের সব দেশের নেতাদের অগ্রগামী ভূমিকা পালন করতে হবে। সমগ্র বিশ্বের এই ক্রান্তিলগ্নে তাদের এটা উপলব্ধি করবার সময় যে, কখনও নিজের বা শুধুমাত্র নিজেদের মানুষদের কথা চিন্তা করে কাজ করা নয়, সামগ্রিক মঙ্গলের জন্য সবার কাজ করা উচিত। অস্ত্র কিংবা অর্থনীতি দিয়ে যুদ্ধ নয়, প্রত্যেক জাতির নেতাদের উচিত বিশ্ব শান্তি এবং সম্প্রীতির জন্য কাজ করা। সকলের জন্য সমান সুযোগ সুবিধা করে দেওয়া যাতে কাউকে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য দেশান্তরিত হতে না হয়। করোনা ভাইরাসের এই মহামারি প্রমাণ করছে যে, যখন কোন দুর্যোগ আসে তা সবার জন্যেই আসে। এই ধরণের মহাদুর্যোগ কখনই মানুষের মধ্যে ভেদেভেদ করে না। কে মুসলিম, কে হিন্দু, কে খ্রিষ্টান বা কে ইহুদি এগুলো কিছুই দেখে না। কে গরীব কে ধনী কিছুই দেখে না, কে রাষ্ট্রপ্রধান আর কে ফকির কাউকেই ছাড় দেয় না। তাই পরস্পরের প্রতি ভেদাভেদ তৈরি না করে পরস্পরের পাশাপাশি দাঁড়ানো উচিত। সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, টাকা পয়সা, মারণাস্ত্র, ক্ষমতার জোড় কোন কিছুই কাজে আসে না এরকম প্রতিকূল সময়ে। মানবতা এবং মানবিকতার উদাহরণ সবসময় টিকে থাকে যুগের পর যুগ।
অবশেষে ভ্রমণপ্রেমীদের উদ্দেশ্যে বলতে চায় যে, অনেকেই উদগ্রীব হয়ে আছেন যে কখন এই প্রতিকূল অবস্থার অবসান ঘটবে আর কখন সবাই বের হবার সুযোগ পাবেন। তবে আপনাদের সবার প্রতি অনুরোধ রইলো যে, যখন প্রতিকূল অবস্থার অবসান ঘটবে তখন সবাই যাতে এখানে ওখানে ঘুরবার জন্য হুমড়ি খেয়ে না পড়ে, একটু সময় যাতে নেয়। কারণ সবকিছুই যদি তাড়াহুড়া করে ঘটতে যায় তবে অনেক ধরণের বিপদের সম্ভাবনা থাকে। তাই সবাই যাতে একটু সময় নেয়। কারণ সবকিছুকে আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সময় প্রয়োজন। এবং সবকিছুকে শুদ্ধি করেই তবে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা উচিত।
So, take your time and let the things to be settled at first. Then go out and explore the world. Hats off and a grand salute to the front-line warriors all over the world.
তথ্যসূত্রঃ
- দৈনিক প্রথম আলো।
- BBC ।
- The Daily Star ।
- Independent.Co.UK।
- NBC USA।
- CBC Canada।
Picture Source – Collected Pictures.