বালি – ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার একটি জনপ্রিয় পর্যটক তীর্থস্থানের ইতিকথা।

দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ার অনেকগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র। বিভিন্ন আগ্নেয়গিরি পর্বত, সমুদ্র সৈকত ও বনাঞ্চলের জন্য এদেশে বিখ্যাত। কথায় আছে যে, কেউ যদি ইন্দোনেশিয়ার সমগ্র প্রাকৃতিক বিষ্ময়গুলো ঘুরে দেখতে চায় তবে তার জন্য এক যুগেরও বেশি সময় লাগবে। তাই ভ্রমণপ্রিয় সবার উচিত এখন থেকেই ঘুরে দেখা। আর শুরু করতে হবে বালি থেকে যা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র যেখানে বিশ্বের দূর-দূরান্ত হতে সবাই ঘুরতে আসে। বালি সম্পর্কে বলতে হলে এক কথায়, এই স্থানটি হল পাহাড় ও সাগরের মিলনস্থল। এখানে জানা অজানা অনেক পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে যা আপনি স্বল্পদিনে ঘুরে শেষ করতে পারবেন না। তাই কথা হবে আজ ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপরাজ্য বালির এদিক – ওদিক নিয়ে। যতটা আমি দেখেছি ও যতটা দেখতে পেরেছি।

বালির সমুদ্র সৈকতসমূহ

দ্বীপরাজ্যে ভ্রমণে বের হবেন কিন্তু সেখানে কোন সমুদ্র সৈকত থাকবে না তা কি হয়? অবশ্যই না। পুরো বালি প্রভিন্সে প্রায় ৪০ টির কাছাকাছি সমুদ্র সৈকত আছে। কিন্তু সকল বীচে যদি আপনি সময় কাটাতে চান তবে এখানকার অন্যান্য আকর্ষণ আপনি মিস করে যাবেন। তাই হাতে গোনা কয়েকটি বীচের কথা আপনাদের জানাচ্ছি । আমি সমুদ্র সৈকতে বেশি ঘুরাঘুরি না করে অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থানগুলোতে বিচরণ করেছি। কারণ আমার নিকট আমাদের দেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতই বিশ্বের মধ্যে সর্বসেরা।

পেনতাই কুটা, লেগিয়ান বীচ ও সেমেনিয়াক বীচ

এই ৩টি বীচের কথা একসাথে বললাম কারণ এই ৩টি বীচই দেখতে বা এগুলোর পরিবেশ মোটামুটি একই রকম। বীচগুলোতে এক্টিভিটিজগুলোও একইরকম যেমন প্যারাসেইলিং, বাগকার রাইডিং ইত্যাদি। এই ৩টি বীচ যেহেতু ৩টি আলাদা এলাকায় অবস্থিত, তাই আপনি বালিতে যে এলাকায় অবস্থান করবেন সে এলাকার বীচে আপনি সামান্য সময় ব্যয় করতে পারেন। বিশেষ করে বিকেলের দিকে। এদের মধ্যে কোন একটি বীচে বিচরণ করলে, অন্যগুলোতে না গেলেও চলবে।

19424528_875868715894826_1153743923523024536_n

কুটা বিচ।

32117037_244030932828161_4251772513551384576_o

সেমেনিয়াক বিচ।

জিম্বারান বীচ

আপনি এখানে যাবেন সন্ধ্যেবেলার পর। কারণ এই বীচের বিশেষত্ব,  এখানকার সীফুড রেস্টুরেন্টগুলোর জন্য। সন্ধ্যের পর এখানকার পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য করবে বিশেষকরে রেস্টুরেন্টগুলোর বীচের মধ্যে ডেকরেশনের জন্য। দক্ষিণদিক হতে বয়ে চলা সমুদ্রের শীতল বাতাস আর বীচের মাঝে মোমবাতি ও মশালের আলোতে সুস্বাদু সামুদ্রিক খাবার ভোজনের অভিজ্ঞতা হবে অসাধারণ। তাই চলে যান সেখানে আপনার প্রিয়জনকে নিয়ে রোমান্টিক ডিনারে। আপনাদের আরও বিনোদন দিতে থাকবে বিভিন্ন ফায়ারপ্লে প্রদর্শনী যা সেখানকার রেস্টুরেন্টগুলো স্থানীয় লোকেদের দ্বারা প্রদর্শন করে থাকে। সেখানে আপনাদের ডিনারে যোগ দিতে পারে রাস্তার আদুরে কুকুর এবং বিড়ালগুলো। আপনার খাবার তাদের সাথে শেয়ার করতে ভুলে যাবেন না কিন্তু।

jimbaran-cafes-a

71749415_10220802880167748_4500495078980059136_o

জিম্বারান বিচ।

পেনতাই পান্ডওয়া

দক্ষিন কুটার বাদুং এলাকার এই সমুদ্র সৈকতটি আমার কাছে একেবারেই অন্যরকম লেগেছে। পাথুরে পাহাড়ের নিচে এই সৈকতের অবস্থান। চুনাপাথরের পাহাড় যেন দেয়ালের ন্যায় ভূমিকে রক্ষা করছে সমুদ্রের পানি থেকে, সেখানকার দৃশ্য দেখলে ব্যাপারটা এমনই মনে হবে। গাড়ি দিয়ে পাহাড়ি রাস্তায় চলার অভিজ্ঞতাটাও দারুণ হবে এক কথায়। আর বীচে রেগুলার এক্টিভিটিজগুলোতো আছেই বাড়তি আনন্দ যোগ করার জন্য। সেখানে পাহাড়ের কোণায় কিছু রেস্টুরেন্ট আছে যেখান থেকে সমুদ্রের চমৎকার দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। দুপুরের লাঞ্চ সেরে নেওয়ার জন্য আদর্শ স্থান এগুলো।

11049522_1664716303806281_93356325344244929_o69806602_10218180516298488_5712164404687011840_o

পেনতাই পান্ডওয়া।

পেনতাই সোকা (ব্ল্যাক স্যান্ড বিচ)

ব্ল্যাক স্যান্ড সোকা বিচের বৈশিষ্ট হল এর বালু কাল রঙয়ের। কিন্তু এর রং কাল কিজন্য তা সঠিক জানা নেই। সেজন্যই এটা অন্যান্য বিচ থেকে আলাদা। লোকমুখে শোনা যায় যে, অনেক অনেক বছর পূর্বে মাউন্ট আগুং পাহাড় হতে উদ্গিরীত আগ্নেয়গিরির ধারা এখান অবধি পৌঁছায় যার জন্য সৈকতে বালুর রং কাল। জানিনা যে এটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য কথা কারণ মাউন্ট আগুং এখানে অনেক দূরে অবস্থিত। অথবা আমার হয়তো এটাও জানা নেই যে, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত কতটা ভয়ংকর হতে পারে। বিচের বালুর মত কোরাল পাথরগুলোও একদম কাল কুচকুচে। সেখানেই হয়তো লোকমুখের কথার কিছুটা সত্যতা পাওয়া যায়। যাই হোক এখানকার পরিবেশ বালির অন্যান্য বিচগুলোর চেয়ে অনেক শান্ত ও কোলাহল মুক্ত। তাই শেষ বিকেলে সূর্যাস্ত উপভোগ করা এখানে দারুণ হবে। আশেপাশে কোন দোকান-পাট নেই, কোন বিচ এক্টিভিটিজেরও ব্যবস্থা নেই। আছে শুধু অপরদিকে নারিকেল বাগান ও জেলেদের কিছু ঘরবাড়ি। তাই বালিতে কিছুক্ষণ নির্জনে সময় কাঁটাতে চাইলে এখানে চলে আসতে পারেন।

 

সোকা বিচ।

এছাড়া উপরে উল্লেখিত সমুদ্র সৈকতগুলো ছাড়াও ঘুরে দেখতে পারেন বালিয়ান বিচ, পাসুত বিচ, পাদাং পাদাং বিচ, লোভিনা বিচ, সানুর বিচ ইত্যাদি। কিন্তু বালির মূল আকর্ষণ কিন্তু এর বিচগুলো নয়, এখানে আরও অনেক কিছু বাকি আছে।

উলুয়াতু টেম্পল

এটি একটি হিন্দু মন্দির। কিন্তু মন্দির হলেও এখানে সবাই আসে তার আশেপাশের পরিবেশ দেখবার জন্য। কারণ, এর অবস্থান সাগরের ধারে পাহাড়ের চূড়ায়। এখান থেকে সাগরকে যতদূর ইচ্ছা দেখা যায়। বিকেল বেলায় এখানে এসে সূর্যাস্ত দেখাটা খুবই অসাধারণ। এখানে আপনি বিভিন্ন ভিউ পয়েন্ট থেকে সাগরকে উপভোগ করতে পারবেন। মূল মন্দিরের বাহিরে একটা প্রশস্থ ওয়াকওয়ে আছে যেখানে পর্যটকরা অবাধে হাঁটাচলা করতে পারেন। বিকেল বেলায় সমুদ্রের শীতল হাওয়া আপনার মন ভরিয়ে তুলবে। মূল মন্দির পরিদর্শন করলে আপনি বালিনীজ হিন্দু ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। এখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের ট্রেডিশন আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ট্রেডিশন থেকে একেবারেই ভিন্ন। এখানকার চারিপাশে আপনি শাখামৃগদের অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করবেন। বাদরদের বাঁদরামির শিকারও আপনি হতে পারেন। সেজন্য আপনাকে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে এবং আপনার চোখে চশমা থাকলে তা খুলে হাতে নিয়ে নিন ও মোবাইল দিয়ে সাবধানে ছবি তুলুন। মন্দিরের খানিকটা বাহিরে একটা খোলা মঞ্চ রয়েছে যেখানে প্রতি সন্ধ্যে বেলায় একটি কালচারাল শো অনুষ্ঠিত হয়। এটা সবার জন্য ফ্রি। তাই চাইলে তা উপভোগ করতে পারেন। এখানে ঢুকতে হলে আপনাকে ৬০০০০ ইন্দোনেশিয়ান রূপিয়াহ খরচ করে টিকিট করতে হবে এবং আপনি যদি হাফপ্যান্ট বা শর্টস পরিহিত অবস্থায় থাকেন তবে আপনাকে লুঙ্গির মত স্যারং কোমরে জড়িয়ে যেতে হবে ও যদি ফুলপ্যান্ট পরা অবস্থায় থাকেন তবে কোমরে কাপড়ের মত বেল্ট বেঁধে ভিতরে ঢুকতে হবে। এগুলো স্পটের বাহিরে বিনামূল্যে সবার জন্য সরবরাহ করা হয় যা ঘুরাঘুরি শেষে ফেরত দিতে হয়। এটা আসলে তাদের সম্প্রদায়ের প্রতি সম্মান দেখানো মাত্র। উলুয়াতু টেম্পল বালির মূল শহর ডেনপাসার থেকে প্রায় ৬০ কিমি দূরে অবস্থিত এবং শেষ বিকেলে যাওয়াটা খুবই উত্তম সময়।

 

উলুয়াতু টেম্পলের কিছু দৃশ্য।

IMG_20190818_181705.jpg

বাঁদরদের বিচরণ।

IMG_20190818_180802.jpg

উলুয়াতু টেম্পলে সূর্যাস্ত দর্শন। 

 

কালচারাল শো প্রদর্শনী ।

তানাহ লট

উলুয়াতু টেম্পেলের মত এটাও একটি হিন্দু মন্দির। উলুয়াতু টেম্পেলের মূল মন্দিরটি সাগরের ধারে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত হলেও এখানাকার মূল মন্দির একদম সমুদ্রের মাঝামাঝিতে অবস্থিত মানে দূর থেকে দেখলে আপনার সেটাই মনে হবে। জোয়ারের সময় সেখান পর্যন্ত যাওয়া পর্যটকদের জন্য সম্ভব হয়না। কিন্তু ভাটার সময় আপনি চাইলে মূল মন্দির পর্যন্ত যেতে পারবেন। আমি মন্দিরের ভেতর যাইনি কারণ সেখানে যেতে হলে আপনাকে অনেক ফরমালিটি পালন করে ঢুকতে হয়। আমি বাহির থেকে যতটা কাছকাছি সম্ভব দেখেছি। এখানে ছোট একটি সমুদ্র সৈকত এবং অনেক পাথরের স্তূপ রয়েছে। মন্দিরে যাবার মূল রাস্তাটা এই পাথরের স্তূপের উপর দিয়েই যা সবসময় সমুদ্রের পানির নিচে ঢাকা থাকে। বড় বড় পাথরের চূড়ায় উঠে ভাল দৃশ্য উপভোগ করা যায়। সাগরের কাছাকাছি আসার জন্য এখানে অনেক দূর হেঁটে আসতে হয়। তবে হাঁটার জায়গাটি একটা সুন্দর পার্কের মত এবং সাগর থেকে অনেকটা উঁচুতে এবং পরিবেশটা অনেক সুন্দর। সমুদের দক্ষিণা হাওয়া আপনাকে এখানে ক্লান্ত হওয়া থেকে মুক্ত রাখবে। এখানে অনেক রেস্টুরেন্ট এবং সুভেনিয়র শপ আছে, চাইলে সেখানে ঢু মেরে দেখতে পারেন। সকালের সময় এখানকার পরিবেশ অনেক নিরিবিলি থাকে। তবে জোয়ারের সময় মন্দিরের রাস্তায় নামবেন না, কারণ পানির স্রোত তখন অনেক বেশি থাকে। ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে।

IMG_20190821_110027.jpg

তানাহ লট। প্রায় সাগরের মাঝে স্থাপিত এক মন্দির।

IMG_20190821_112326.jpg

এই পাথরের চূড়াতে মূল মন্দিরটির অবস্থান। 

IMG_20190821_110448.jpg

পাথর বিছানো সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের আনাগোনা।

 

চারপাশের দৃশ্য।

 উলুন দানু টেম্পল

এটি বালির বেদুগালের নিকটে ব্রাতান লেকের তীরে খুব দর্শনীয় এবং সর্বাধিক দর্শনার্থীযুক্ত এক মন্দির।একে বালিনীজ হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থানও বলা হয়ে থাকে এবং এই মন্দিরের ছবিকে বালির প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। হ্রদের জলের স্তরের উপর নির্ভর করে স্থাপিত এই মন্দিরটি যখন চারপাশে জলের আঁধার থাকে তখন একে এক ভাসমান ভবন হিসেবে দেখা যায়। এখানে একটি সুন্দর বাগান এবং একটি বুফে রেস্তোঁরা রয়েছে যা পর্যটকদের দ্বারা দেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম। ১৯৩৩ সালে নির্মিত এই মন্দিরটি বালিয়ানের জল, হ্রদ এবং নদীর দেবী দানুর নৈবেদ্য অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করা হত, কারণ ব্রাতান হ্রদের গুরুত্ব ছিল কেন্দ্রীয় বালিতে সেচের প্রধান উৎস হিসাবে। মন্দিরগুলি বালিনীজ সংস্কৃতি এবং একটি ভিন্ন যুগের হিন্দু ধর্মকে প্রতিফলিত করে। বালিতে থাকাকালীন এটি অবশ্যই দেখার জায়গা। উলুয়াতু মন্দিরের মতো আপনার অবশ্যই এখানে ড্রেস কোড অনুসরণ করতে হবে।

উলুন দানু মন্দিরের চারপাশের দৃশ্য।

তেগেলালাং রাইস টেরাস

বালির উবুদ এলাকায় এই টুরিষ্ট স্পটটির অবস্থান। বালির উবুদ এলাকাটা অনেক পাহাড়ি একটা এলাকা এবং এখানকার লোকজন বেশিরভাগই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পাহাড়ি এলাকা হওয়াতে এখানে তারা এক বিশেষ উপায়ে কৃষিকাজ বা ধানচাষ করে থাকেন যা অনেকটা আমাদের দেশের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর জুমচাষের মত। কিন্তু তা সম্পূর্ণভাবে একইরকম নয়। তাদের এই চাষাবাদের পদ্ধতি দেখতে চাইলে আপনাকে এখানে আসতে হবে। আমাদের দেশের পাহাড়ি চাষীগণ যেমন পাহাড়ের নির্দিষ্ট কোন এক জায়গাতে ফসলের আবাদ করেন এখানে তেমনটা নয়। এখানে তারা পাহাড়কে সিঁড়ির মত করে কাঁটে, তারপর সেই সমতল জায়গাতে ধানের চারা রোপণ করে। প্রত্যেকটা সিঁড়ি এমনভাবে কাঁটা হয় যাতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা স্বয়ংক্রীয়ভাবে হয়ে যায়। এবং পাহাড়ের একদম উঁচুতে পানি সংরক্ষণের জন্য রিজার্ভার বানানো হয় যাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ হয়ে নালাগুলোর মাধ্যমে ক্ষেতগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা যায়। ছবিগুলো দেখলে ভাল ভাবে বুঝবেন। এই রাইস টেরাসটা অনেকটা পার্কের মত যেন এক কৃষি উদ্যান। এখানকার ওয়াকওয়েতে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু এর জন্য আলাদা টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। কিন্তু হেঁটে বেড়াতে না চাইলে পার্কের একদম উপরে একটি কফিশপ আছে সেখানে বসে পুরো রাইস টেরাসে চোখ বুলাতে পারেন। আর হ্যাঁ, এখানে একটা কফি ফার্ম আছে যেখানে বিশ্বের সবচাইতে দামী কফি উৎপাদন করা হয়। কিন্তু কফি উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি আপনার কাছে পছন্দের নাও হতে পারে। লুয়াক বা কাঠবিড়ালি জাতীয় এক প্রানীর বিষ্ঠা থেকে এই কফি প্রক্রিয়া করা হয়। এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু নাই বললাম। আগ্রহ থাকলে গুগলে সার্চ করে দেখতে পারেন। আর আপনি চাইলে সেই কফি এখানে বিনামূল্যে পান করে এর স্বাদ গ্রহণ করে দেখতে পারেন। এক্সট্রা এক্টিভিটি হিসেবে সেখানে ওয়াইল্ড সুইং রাইডে চড়তে পারেন। এর অভিজ্ঞতা হবে খুবই রোমাঞ্চকর।

IMG_20190819_112638.jpg

তেগেলালাং রাইস টেরাস। 

IMG_20190819_114512.jpg

রাইস টেরাসে হাঁটার পথে এরকম ঝুলন্ত ব্রিজ পারি দিতে হবে।

 

চারপাশের দৃশ্য।

 

কিছু স্থাপত্যকর্ম।

68600701_2736737639669618_7287486188984729600_o

চড়তে পারেন রোমাঞ্চকর ওয়াইল্ড সুইং রাইডে।

 

লুয়াক কফি প্রক্রিয়াকরণের কিছু দৃশ্য।

তেগেনুংগান ওয়াটারফল

বালির জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হল এই তেগেনুংগান ওয়াটারফল এবং এখানে সবচাইতে টুরিষ্টদের আনাগোনা বেশি থাকে। মূল ঝর্ণা ধারার কাছে যেতে হলে অনেকদূর সিঁড়ি বেয়ে উপর নিচ করে যেতে হবে। সেখানে ঝর্ণার জলস্রোত অনেক প্রবল। আপনি ঝর্ণার অনেকদূরে থাকলেও হালকা পানির ছিটা আপনার শরীরে অনুভব করতে পারবেন। চাইলে সেখানে দুপুরের গোসল সেরে নিতে পারেন। তারপর আরও সিঁড়ি বেয়ে চলে যেতে পারেন ঝর্ণার উপরে এর উৎসমুখে। তবে সেখানে কিছু বিপদজনক স্থান আছে যা সেখানে চিহ্নিত করা আছে, সেসব স্থানে বিচরণ করা থেকে বিরত থাকুন। এই ঝর্ণার পানির উৎপত্তিস্থল কোথায় তা আমার জানা হয়নি। কিন্তু পানির স্রোত এত প্রবল যা আমাকে অবাক করে দিয়েছে। সেখানেও এক্সট্রা এক্টিভিটি হিসেবে ওয়াইল্ড সুইং রাইডে চড়তে পারেন। এবং উপরে স্থাপিত ফেন্সি রেস্টুরেন্টগুলোতে লাঞ্চ সেরে নিতে পারেন। সেখানে কিছু বাদরের দেখাও পেতে পারেন।

IMG_20190819_144533.jpgIMG_20190819_142741.jpg

তেগেনুংগান জলপ্রপাত।

 

ঝর্নাধারায় পৌঁছানোর ট্রেইল ও এর চারপাশ।

 

জলপ্রপাতের উপরের কিছু দৃশ্য।

কিনতামানি মাউন্টেন ভিউ পয়েন্ট

আমার কাছে বালির এই জায়গাটি সবচাইতে বেশি ভাল লেগেছে।  পুরো কিন্তামানি এলাকাটাই হল বালির সবচাইতে উঁচু পাহাড়ি এলাকা এবং এখান থেকে আপনি মেঘ স্পর্শ করতে পারবেন। বালির বাংলি অঞ্চলের এই এলাকাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০০০ ফুট উপরে অবস্থিত। আর এর মাউন্টেন ভিউ পয়েন্ট থেকে আপনি মাউন্ট বাতুর এবং মাউন্ট আগুংকে একসাথে দেখতে পারবেন। সকালের দিকে এর ভিউ ভাল পাওয়া যায় না। কিন্তু দুপুরের দিকে যখন পরিবেশটা একটুর রৌদ্রোজ্জ্বল হয় তখন অসাধারণ এক দৃশ্য দেখা যায়। মাউন্ট বাতুর ও মাউন্ট আগুংকে আগ্নেয়গিরির ভয়ানক উৎপত্তিস্থল হিসেবে গণ্য করা হয়। দূর থেকে পাহাড় দুটোকে দেখলেই সেই ধারণা করা যায়। পাহাড় দুটিতে পর্বতারোহীগণ হাইকিং করে উঠে থাকেন। এটা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সেই রাত ২টা থেকে হাইকিং শুরু করতে হয় এবং মোট ৬ ঘন্টার ওঠা-নামার পথ। সেখানে এমন একটা জায়গা আছে যেখানে একটি ডিম ভেঙে রাখলে তা ভাঁজি হয়ে যায় যা লোকমুখে শুনেছি। এর থেকে বোঝা যায় যে এখানে আগ্নেয়গিরি এখনও সুপ্ত অবস্থায় আছে। পর্বতারোহীগণ হাইকিং করে সেখানে পাহাড়ের উপর থেকে সূর্যোদয় উপভোগ করেন। কিন্তু আমার পক্ষে এই কষ্টসাধ্য হাইকিং করা একদম অসম্ভব বলে, আমি তা করবার কথা চিন্তাই করিনি। যার আমার মত হাইকিং করতে চান না তারা এখানে এসে দূর থেকে এই আগ্নেয়গিরির পাহাড় দুটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। আমার কাছে এখানকার রাস্তাঘাটগুলো অনেক সুন্দর এবং পাশাপাশি অনেক ভয়ংকরও মনে হয়েছে। উঁচুনিচু রাস্তা এবং সাপের মত বাঁকানো রাস্তায় সেল্ফ ড্রাইভিং করার অভিজ্ঞতা ছিল সবচাইতে রোমাঞ্চকর। আর চাইলে আপনি এর আশেপাশের সুভেনিয়র শপ ও বিভিন্ন স্টোর থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে কেনাকাটা করতে পারেন।

IMG_20190821_145358.jpg

মাউন্ট বাতুর।

IMG_20190821_145033.jpg

মাউন্ট আগুং।

IMG_20190821_145435.jpg

কিন্তামানি ভিউ পয়েন্টে দর্শনার্থীদের আনাগোনা।

IMG_20190821_151606.jpg

কিন্তামানি এলাকার রেস্টুরেন্টগুলোতে লাঞ্চ করার অভিজ্ঞতা হবে অসাধারণ। 

বাতুর ওয়াটার পার্ক

এটা খুবই একটা সাদামাটা জায়গা, বিশেষ কোন স্থান নয়। কিন্তু কিন্তামানি লেকটিকে একদম কাছ থেকে দেখতে হলে এর চেয়ে ভাল কোন জায়গা নেই। কিন্তামানি লেকটি মাউন্ট বাতুরের বরাবর একদম নিচে অবস্থিত। নিচুতে এর অবস্থান হওয়ায় আপনাকে কিন্তামানি ভিউ পয়েন্ট থেকে গাড়িতে করে কিছুটা নিচে নামতে হবে এবং অনেকটা পথ পার হয়ে আপনাকে এই পার্কে প্রবেশ করতে হবে। এখানে আপনি লেকের পাড়ে বসে কিছুটা নির্জন সময় কাটাতে পারেন। এখানে টুরিষ্টদের সেরকম কোন ভিড় লক্ষ্য করিনি। পার্কের ভেতরটা একদম সাদামাটা একটা সুইমিং পুল আছে এবং কিছু ওয়াটার রাইডস রয়েছে। আরও চাইলে আপনি বড়শি দিয়ে লেক থেকে মাছ ধরতে পারবেন। তাই হাতে সময় থাকলে টিকিট কেটে এখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন। সেখানে কিছু ভিলা রয়েছে যেখানে রাত্রি যাপনের সুবিধা আছে এবং কিছু রেস্তোরাঁও রয়েছে।

 

বাতুর ওয়াটার পার্কের কিছু চিত্র।

IMG_20190821_163217.jpg

কিন্তামানি লেকের ধারে বসে উপভোগ করতে পারেন মাউন্ট বাতুরের চমৎকার দৃশ্য।

নুসা পেনিদা আইল্যান্ড

আমরা সকলেই জানি যে, বালি ইন্দোনেশিয়ার একটা দ্বীপরাজ্য। কিন্তু এই দ্বীপরাজ্যের আরও কিছু শাখাদ্বীপ রয়েছে যার মধ্যে নুসা পেনিদা অন্যতম। ৬০০ বর্গমিটার আয়তনের এই দ্বীপে প্রায় ৩০০০ পরিবারের বসবাস এবং এখানে রয়েছে দুনিয়ার চমৎকার সব সৃষ্টি যা দেখবার জন্য পর্যটকেরা দূর দূরান্ত থেকে এসে থাকেন। বিশ্বজুড়ে ভ্রমণকারীরা সাধারণত এই দ্বীপটিতে একটি দিনের ভ্রমণ করেন। কিছু ট্যুরিস্টরা পুরো দ্বীপটি ঘুরে দেখার জন্য কিছুদিন এখানে থাকতে বেছে নেন। তবে, একদিনে পুরো দ্বীপটি ঘুরে দেখা অসম্ভব। আপনি কেবল নুসা পেনিদার পশ্চিম উপকূল ঘুরে বেড়াতে পারবেন। পশ্চিম উপকূলে আপনি তিনটি স্পটে বিচরণ করতে সক্ষম হবেন তা হল কেলিংকিং বিচ, অ্যাঞ্জেলস বিলাবং (ব্রোকেন ব্রিজ) এবং ক্রিস্টাল বে। আমার জন্য এটা একদিনের সফর ছিল। আমি আপনাদের জানাবো আমার সেই একদিনের সফরনামা।

69348605_2738629086147140_8584410946229764096_o.jpg

ফাস্টবোটে চড়ে নুসা পেনিদা হতে ফিরে আসার মুহূর্তে সূর্যাস্তের দৃশ্য।

কেলিংকিং বিচ

এটি একটি সমুদ্র সৈকত তবে এটি মূল পাহাড় থেকে প্রায় ৪০০ মিটার নিচে। মূল সৈকতে পৌঁছতে আপনাকে হাইকিং করে অনেক দূর নিচে নামতে হবে। তবে, বিচ পর্যন্ত যাবার পূর্বে আপনাকে ভাবতে যে আপনার কাছে সময় কতটুকু আছে। আপনি যদি নুসা পেনিদাতে এক-দু দিন থাকার পরিকল্পনা করে থাকেন তবে এই জায়গাটি পুরোপুরিভাবে ঘুরে দেখতে আপনি অর্ধেক দিন সময় নিতে পারেন। আপনি সেখানে নীচে যেতে পারেন, সাঁতার উপভোগ করতে এবং সৈকতের চারপাশে হাঁটতে পারেন। উপরে ও নীচে চলাচল করা খুব কঠিন কারণ, মাটির তৈরি সিঁড়ি প্রায় ভাঙা অবস্থায় আছে এবং আপনাকে উপর ফিরে যাবার জন্য অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মনে রাখবেন যে, একটুখানি পা পিছলে গেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। বিচ থেকে উপরে উঠে আসার জন্য আপনার কমপক্ষে ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘন্টা সময় লাগবে। এটি ফটো প্রেমীদের জন্য একটি স্বর্গ। আপনি এই স্পটের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বিভিন্ন কোণ থেকে ফটো নিতে পারেন। আমার যাত্রায় আমি মিড পয়েন্টে নেমে কিছু ফটো ক্যাপচার করে ফিরে এসেছি। উপরে উঠার সময় আমি প্রায় অর্ধ মৃত হয়ে গিয়েছিলাম। উপরে আরোহণ করা খুবই কঠিন। সুতরাং, আমি আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি যে এতদূর নেমে যাবেন না এবং দুটো পানির বোতল আপনার কাছে রাখুন। আপনার সময় নেওয়া উচিত এবং তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। আপনার উপর থেকে আরও ভাল দৃশ্য থাকবে এবং আপনি সমুদ্রের পাশে শিলা এবং চূনাপাথরগুলির গঠন দেখতে পাবেন। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যে বিশাল এক ডাইনোসোর সমুদ্রে মাথা ডুবিয়ে পানি পান করছে। এখানেই কেলিংকিং নামের অর্থ পরিপূর্ণ হয়। যার অর্থ হল লোকাল ভাষায় ‘দানব’। এই জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পূর্ণ করে এখানকার সবুজ পাহাড় এবং নীল জলের সংমিশ্র আপনার মনকে জুড়িয়ে দেবে । তা ছাড়া উপসাগরের বাতাস আপনাকে সর্বদা সতেজ করে দেবে।

IMG_20190820_115103.jpg

 

কেলিংকিং বিচ এবং এর আশপাশের কিছু দৃশ্য।

কেলিংকিং বিচে আরোহণের সেই রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। ভিডিওতে দেখুন।

অ্যাঞ্জেলস বিলাবং ও ব্রোকেন ব্রিজ

এখানে, আমি “অ্যাঞ্জেলস বিলাবং” এই নামের অর্থ আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হয়েছি। আমি কিছু স্থানীয়কে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কিন্তু এর কোন সুস্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি। তাদের মধ্যে একটি জবাব দিয়েছিল যে “বিলাবং” এর অর্থ পুকুর বা সুইমিং পুল যেখানে কোন দেবদূত সেই পুলটিতে সাঁতার কাটছিল এবং তার কারণে এটির নামকরণ হয়েছিল। এখানে, আপনি দেখতে পাবেন কীভাবে উপসাগর প্রবাহটি তার প্রবাহপথকে নিজেই পরিবর্তিত করে। চুনাপাথরের শিলাগুলোর গঠন আপনাকে বিস্মিত করবে এখানে। এখানকার দৃশ্য দেখে মনে হবে যে সমুদ্রের উপর কিছু খিলান দাঁড়িয়ে আছে। চুনাপাথর শিলাগুলির গঠন সমুদ্রের জলকে তাদের মধ্যে এবং তার চারপাশে পাথরের ভিতরে ধরে রাখে যার ফলে এগুলোকে পাথরের ভিতর পুকুর বা সুইমিং পুলের মতো দেখায় যার ইংরেজী অর্থ হল লাগুন।  আপনি চাইলে সেসব লাগুন বা রক পুলে সাঁতার কাটতে পারবেন। তবে উচ্চ জোয়ারের সময় সাঁতার কাটবেন না। জলের প্রবাহের গতি সেই সময়ে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যায়। জলের প্রবাহ কখনও কখনও উচ্চ জোয়ারের সময় পাথরের খাড়াগুলির শীর্ষ স্পর্শ করে ফেলে। এটি দেখতে খুব দূরে থেকে আশ্চর্যজনক তবে আপনি এটি খুব কাছ থেকে দেখতে চাইলে এটি খুব বিপজ্জনক হতে পারে। আপনি দেখতে পাবেন যে একটি চুনাপাথরের শিলার খিলানটি মাঝখানে ভেঙে গেছে এবং ভাঙা অংশ দিয়ে সমুদ্রের জল গড়িয়ে যাচ্ছে। তখন আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনি ব্রোকেন ব্রিজকে দেখছেন যা অ্যাঞ্জেলস বিলাবংয়ের মূল স্থান থেকে খুব দূরে নয়। দূরদর্শন থেকে দেখে মনে হচ্ছে এটি সেতুর মতো যা কোনভাবে ভেঙে গেছে। আপনি ব্রিজের উপর দিয়ে হাঁটতে পারেন এবং নীল জলের উপর দিয়ে প্রাকৃতিক চুনাপাথরের গঠনপ্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন। একটি ট্রেল আপনাকে প্রধান স্থান থেকে ব্রিজের দিকে নিয়ে যাবে। স্পটটির চারপাশের দৃশ্যগুলি এত সুন্দর যে আপনি কল্পনাও করতে পারেননি। এবং আপনি যদি ভ্রমণকারী হন তবে আপনার মন নিজের থেকে এখানে থাকার দাবি করবে। সামগ্রিকভাবে, এই দর্শনীয় স্থানটি আপনাকে সুন্দর ক্লিফস এবং মূল উপকূলীয় লাইনের দৃশ্য উপস্থাপন করবে। একটি ভাল খবর আছে তা হল আপনাকে হাইক করতে হবে না। রাস্তাগুলি যথারীতি সরু তবে মসৃণ। তাই, আপনি ক্লান্ত হবেন না। আপনি মূল পয়েন্টের নিকটবর্তী স্টলগুলি থেকে কিছু নারকেল জল পান করতে পারবেন।

 

অ্যাঞ্জেলস বিলাবং এর কিছু দৃশ্য।

IMG_20190820_134408.jpg

রক পুল।

 

ব্রোকেন ব্রিজের কিছু ছবি।

ক্রিস্টাল বে

এটি একটি সমুদ্র সৈকত। এখানে কিছুই বিশেষ কিছু নয়। সৈকত থেকে, আপনি চারপাশের সুন্দর ক্লিফগুলি দেখতে সক্ষম হবেন। যা অনেকটা বালির অন্যান্য সমুদ্র সৈকতের মত। সৈকতের পূর্ব দিকে আপনি কয়েকটি বড় প্রবাল পাথর এবং একটি সুউচ্চ পাহাড় দেখতে পাবেন এবং সেখানে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারে। পাহাড়ের শীর্ষ থেকে কিছু সুন্দর দর্শন পাবেন। সৈকতের মাঝামাঝি জায়গা থেকে আপনি দেখবেন একটি বিশাল পাথরের পাহাড় জলে্র মাঝে দাঁড়িয়ে আছে যা দেখতে একটি দ্বীপের মতো দেখাচ্ছে। আপনি সেখানে একটি নৌকায় যেতে পারেন। তবে এক দিনের ভ্রমণকারীদের পক্ষে এটি সম্ভব হবে না। এই সৈকত সম্পর্কে একমাত্র বিশেষ জিনিস হল এর জল যা স্ফটিক স্বচ্ছ। বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ ভ্রমণকারীরা এখানে বিকেলের শেষ দিকে আসেন এবং তারা সাধারণত সাঁতার কাটে এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করেন। 

 

ক্রিস্টাল বের এদিক ওদিক।

এই ছিল আমার বালির সফরনামা। আপনি চাইলে এর আরও কিছু অংশ বা দ্বীপগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। আপনি চাইলে গিলি আইল্যান্ড ও নুসা লেম্বাগান আইল্যান্ড ঘুরে দেখতে পারেন। এই দ্বীপগুলোতে ঘুরতে হলে আপনাকে সেখানে কমপক্ষে একরাত্র যাপন করতে হবে। নুসা পেনিদের মত দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা সম্ভব নয়। আমার সফর ছিল মোট ৫ দিনের তাই ইচ্ছা সত্ত্বেও সেখানে গমন করতে পারিনি। আপনার পরিকল্পনা যদি সেখানে সপ্তাহখানেক থাকার হয় তবে আপনি সেই জায়গাগুলোতে যাবার চেষ্টা করতে পারেন। এছাড়া বালিতে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য স্থান যেমন উবুদ মাঙ্কি ফরেষ্ট, নিগারা ওয়াটারফল, সাম্বাগান ওয়াটারফল, বালি সাফারি পার্ক ইত্যাদি স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারেন।

থাকা ও খাওয়া-দাওয়া ব্যবস্থা

দেশের বাইরে ঘুরতে গেলে আমরা সর্বপ্রথম চিন্তা করি যে, কোথায় গিয়ে থাকবো এবং খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা কিভাবে করবো আর খরচই বা কত হবে? এটা যৌক্তিক চিন্তা। আপনি যদি বালি সফরে আসেন তবে আমি বলবো যে, আসার পূর্বে এদেশ থেকেই হোটেল বুকিং দিয়ে আসা। কারন এখানে এসে হোটেল খোঁজা হবে বোকামীর কাজ, সে আপনি কলকাতা বাদে যেখানেই যান না কেন। আর ইন্দোনেশিয়ার ইমিগ্রেশনে অফিসার আপনার হোটেল বুকিং ও রিটার্ন ফ্লাইট টিকিট দেখতে চাইবেন। যদিও আমার ক্ষেত্রে আমাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করা হয়নি, শুধু পাসপোর্টে সিল মেরে যেতে দিয়েছে। কিন্তু অনেককের কাছ থেকে হোটেল বুকিং ইনফরমেশন জানতে চেয়েছে তারা। তাই হোটেল বুকিং দিয়ে আসাটাই হবে উত্তম। তাই এখানে আসার পূর্বে আপনি Booking.com, Agoda কিংবা Expedia থেকে যেকোন মানের হোটেল আপনার পছন্দমত বুকিং করতে পারেন। আপনি যদি এখানকার কোন মাধ্যম হতে বুকিং করতে চান তবে Flight Expert হবে বাংলাদেশের মধ্যে বেস্ট অপশন। চাইলে আপনি দেশীয় কোন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে কোন ট্যুর প্যাকেজ ও নিতে পারেন। হোটেলগুলোতে সর্বনিম্ন ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০০ টাকার মধ্যে আপনি পার নাইটের জন্য রুম পেয়ে যাবেন। ভাল ভাল হোটেল্গুলো সাধারণত কুটা, সেমেনিয়াক, লেগিয়ান এবং নুসা দুয়া এলাকায় অবস্থিত। সেখান থেকে আপনি পুরো বালি ঘুরে দেখতে পারেন। আপনি উবুদ কিংবা কিন্তামানি এলাকায় ভিলা ভাড়া করে থাকতে পারেন, সেক্ষেত্রে খরচ একটু বেশি হবে। তবে অনেকজন মিলে একসাথে গেলে খরচ সেখানে সাধ্যের মধ্যেই থাকবে। বালিতে একটা সমস্যা হল এক একটা স্পট অনেক দূরে দূরে সেজন্য অনেকেই অনেকগুলো হোটেল চেঞ্জ করে থাকেন। তবে একটি সুপরিকল্পনা থাকলে আপনি এ ধরনের ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবেন।

 

কুটা এলাকার এদিক ওদিক। এখানেই বেশিরভাগ পর্যটকদের অবস্থান হয়ে থাকে।

খাওয়া-দাওয়া নিয়ে চিন্তিত হবার কোন কারণ নেই। এখানে প্রায় সবখানেই হালাল খাবার পাওয়া যায়। খরচ ও খুব একটা বেশি নয়। আপনি যদি এখানকার লোকাল ফুড বা সীফুড ট্রাই করেন তবে আপনার খরচ কম হবে। তবে উবুদ এলাকাটা একটু ট্রেডিশনাল এরিয়া হওয়াতে সেখানে হালাল খাবার পাওয়া একটু ঝামেলার হতে পারে। প্রায় সবখানেই শূকরের মাংস বিক্রি হয়। তাই একটু বুঝে শুনে নিবেন। এছাড়া এখানকার ইন্টারন্যাশনাল ফুড চেইন শপ যেমন KFC, Pizza Hut, Burger King, McDonald’s ও Starbucks এগুলোতে কম খরচে খাওয়া-দাওয়া সম্ভব। আপনার মিল প্রতি ১ লক্ষ ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়াহ বা ৬০০ টাকা সর্বোচ্চ খরচ হতে পারে।

যাতায়াত ও অভ্যন্তরীন ঘুরাঘুরির ব্যবস্থা

আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে এখানে আসতে চান তবে আপনাকে মালিন্দো এয়ার বা সিংগাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ধরে বালির নগুরাহ রাই বিমানবন্দরে আসতে হবে।। সেক্ষেত্রে আপনাকে কুয়ালালামপুর কিংবা সিংগাপুরের চাংগী এয়ারপোর্টে ট্রানজিট ধরে আসতে হবে। রিটার্ন টিকিট খরচ পড়বে ৩০ থেকে ৪০ হাজারের ভিতর, তাই যত সম্ভব আগে টিকিট কেটে ফেলুন। আমি বলবো যে, সিংগাপুর এয়ারলাইন্সে আসার জন্য, কারণ মালিন্দো এয়ারে আমার অভিজ্ঞতা একদম ভাল নয়। আর চাংগী এয়ারপোর্টে লম্বা সময় লে ওভার পড়লে কোন চিন্তার কারণ নেই। এই এয়ারপোর্টটা একদম দেখার মত। এখানে ঘুরাঘুরি করার মত অনেক জায়গা রয়েছে বিশেষ করে জুয়েল সেন্টারের কথা না বললেই নয়। এছাড়াও এখানে আরও অনেক সুযোগ সুবিধা আছে যা কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে নেই।

 

নগুরাহ রাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরের দৃশ্য।

সেখানে পৌঁছে আপনি তিন ভাবে সেখানে ঘুরাঘুরি করতে পারেন। গাড়িতে , বাইকে কিংবা প্যাকেজ গ্রুপ টুরে বাসে করে। গাড়ি ড্রাইভারসহ দিনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৯ লক্ষ রুপিয়ার মত দিনে ৮ ঘন্টার জন্য। তবে আপনি যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারবেন বালির মূল ভূখন্ডের মধ্যে। অনেকজন মিলে একসাথে গেলে খরচ সাধ্যের মধ্যেই থাকবে। লোকজন কম হলে প্যাকেজ গ্রুপ টুরে বাসে করে ঘুরতে পারেন। এক্ষেত্রে খরচ হতে পারে ৩ থেকে ৪ লক্ষ রুপিয়াহ প্রতিজন এবং এর মধ্যে লাঞ্চ করাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বিভিন্ন লোকেশনে বিভিন্ন ট্যুর প্যাকেজ রয়েছে এবং আপনার হোটেলের বাহিরে অনেক ট্যুর অপারেটরের দেখা পাবেন। আমি সেখানে একটি ছোট সেল্ফ ড্রাইভিং কার ভাড়া করেছিলাম ৪ দিনের জন্য ১৪০ ডলার খরচ করে এবং নিজে ড্রাইভিং করে একা একা ঘুরে বেড়িয়েছি। তেল খরচ প্রায় ৩ লক্ষ রুপিয়ার মত লেগেছিল।  রোডগুলো ছিল অনেক সুন্দর ও থ্রিলিং। প্রশস্ত রাস্তা ও আঁকাবাঁকা টারনিং আপনার ড্রাইভিং এক্সপেরিয়েন্সকে করবে মনমুগ্ধকর। তবে আমি ডেনপাসার শহরে দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যামের সম্মুখীনও হয়েছি। কিন্তু ঢাকা শহরের মত এতটা অস্বস্তিকর ছিল না সেটা। আপনি বাইক ভাড়া করে ঘুরতেও পারেন। এতে খরচ খুবই কম। সবাই তাই করে দেখেছি।  কিন্তু পাহাড়ি রাস্তায় বাইক বা স্কুটি চালানো অনেক বিপদজনক। যাইহোক ড্রাইভিং এর সময় সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করবেন। বালির কোন জায়গা কোথা থেকে করদূর এটা আসলে নির্ভর করে আপনি বালির কোন এলাকায় হোটেল নিয়েছেন তার ওপর। তবে আপনি যেখানেই যাবেন না কেন আপনি সেখানে কোন পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে পারবেন না যেমন বাস বা ট্রেন এরকম। হয় আপনাকে গোজেক বা গ্রেব ইউস করতে হবে বা আপনাকে দিন হিসেবে গাড়ি ভাড়া নিতে হবে, তারপর আপনি সারাদিনে যেখানে খুশি যান না কেন আপনি এ মাথা থেকে ও মাথা যেতে পারবেন। সোলো ট্রাভেল করলে এখানে খরচ বেশি। আপনি প্যাকেজ ট্যুরে দিন হিসেবে ঘুরতে পারেন বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রেটে। সেখানে আপনিসহ বড় একটা গ্রুপ টুরিস্ট বাসে করে বিভিন্ন স্পটে যায়। এক্ষেত্রে আপনার খরচ কিছুটা কমবে কিন্তু খুব একটা বেশি কমবে না। ভাল কথা হল প্যাকেজ ট্যুরের মধ্যে লাঞ্চ ও ডিনার উল্লেখ থাকে। সবচেয়ে ভাল উপায় হল বাইক বা সেল্ফ ড্রাইভিং কার ভাড়া করা। সোলো ট্রাভেলারদের জন্য বেস্ট অপশন।

IMG_20190820_155054.jpg

বালির আঁকাবাঁকা পথ।

নুসা পেনিদাতে ডে-ট্রিপ কিংবা অন্যান্য আইল্যান্ডে ট্যুর দিতে চাইলে আপনি সেখানকার ট্যুর অপারেটরদের সাহায্য নিতে পারেন। লোকেশন এবং সময়ভেদে দাম বিভিন্ন রকমের আছে, তবে দরদাম করে নিতে ভুলবেন না। নুসা পেনিদা বা অন্যান্য দ্বীপে ফাস্ট বোটে করে যেতে হয়। উপসাগর দিয়ে নৌকো ভ্রমণ খুব রোমাঞ্চকর হবে সবার জন্য। আমার অবশ্যই আপনাকে বলতে হবে যে নুসা পেনিদার রাস্তাগুলি খুব সংকীর্ণ এবং বিপজ্জনক। পুরো নুসা পেনিদা দ্বীপটি হল একটি পাহাড়ি অঞ্চল, এ কারণেই রাস্তাগুলি উপরের দিকে চলছে। কিছু রাস্তা পুরোপুরি অফ-রোড এবং খুব রুক্ষ। সুতরাং, আপনি যদি গাড়িতে বসে থাকেন বা বাইক চালাচ্ছেন তবে এটি আপনার জন্য একটি রোলার কোস্টার রাইড হবে। সুতরাং, আমি আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি যে আপনি সেখানে বাইক বা গাড়ি চালাবেন না। এইরকম রাস্তা আমি বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতেও আগে দেখিনি। 

 

নুসা পেনিদার ভয়ঙ্কর রাস্তার ভিডিও।

শপিং

শপিং এর জন্য বালিতে যেতে পারেন বিচওয়াক শপিং মল কিংবা গ্যালেরিয়া মলে। এছাড়া কুটা, সেমেনিয়াক, লেগিয়ান ইত্যাদি এলাকায় ছোট ছোট স্টল ও অনেক সুভেনিয়র শপ রয়েছে যেখানে থকে আপনারা শপিং সেরে নিতে পারেন।

IMG_20190821_201150.jpg

বিচওয়াক শপিং মলের ভেতরে।

অবশেষে বলতে চাই যে, যেখানেই ভ্রমণ করুন না কেন সবসময় খেয়াল রাখবেন আপনার জন্য পরিবেশ যাতে নোংরা না হয়। পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের সর্বদা সচেতন থাকা উচিত। আর এমন কোন কাজ করবো না যাতে, বাংলাদেশীদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।

So, travel more & be happy. Always remember that your mobility is your freedom.

ছবিসূত্রঃ নিজস্ব ধারণকৃত।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s