বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ এবং এখানে সকল ধর্মের লোক একত্রে একসঙ্গে বসবাস করলেও এদেশে মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিদ্যমান অনেক অনেক বছর আগে থেকে। সেজন্য এদেশের প্রায় সকল স্থানেই অসংখ্য মসজিদ বিদ্যমান। যদি রাজধানী শহরের কথা বলি, তবে এখানে স্থাপিত অসংখ্য মসজিদের কারণে ঢাকা শহরকে মসজিদের শহর বলা হয়। তাছাড়াও ঢাকার বাইরে অন্যান্য জেলা বা থানা শহরগুলোতেও স্থাপিত মসজিদের সংখ্যা অনেক। ধর্মীয়ভাবে সকল মসজিদগুলো আমাদের নিকট খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু কিছু কিছু মসজিদের নির্মাণকাজ ও এদের নির্মাণকৌশলী আমাদেরকে আলাদাভাবে মুগ্ধ করে। উদাহরণসরূপ বাগেরহাট জেলার ষাট গম্বুজ মসজিদ যা ইউনেস্কো কর্তৃক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত। টাঙ্গাইল জেলার আতিয়া মসজিদের কথাও বলতে হয়। এই মসজিদগুলো এদের নির্মাণকাজ, নির্মাণকৌশলী এবং এদের চারপাশের পরিবেশের জন্য পর্যটকদের কাছে বিখ্যাত। তবে এগুলো হল ঐতিহাসিক স্থাপনাসমূহের কথা। এই মসজিদগুলো ছাড়াও বাংলাদেশে বর্তমান শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছে এমন অনেকগুলো মসজিদ যার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ স্থাপনাগুলো খুবই চমৎকার। তাই আজ কথা হবে, বাংলাদেশে গত ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে নির্মিত সুদর্শনীয় ১০ টি মসজিদের ইতিবৃত্তান্ত সম্পর্কে।
সাউথ টাউন জামে মসজিদ, ঢাকা
এই মসজিদটি ঢাকা জেলার মধ্যে অবস্থিত হলেও, এটি স্থাপিত হয়েছে রাজধানী ঢাকার অদূরে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জ থানার রাজেন্দ্রপুর এলাকায়। এই মসজিদের আউটলুক একদম একটি রাজপ্রাসাদের মত এবং যদি এই মসজিদ সম্পর্কে কিছু না জেনে থেকে হঠাৎ করে এর সামনে এসে পড়েন, তবে একে আপনার একটি রাজপ্রাসাদ বলেই মনে হবে। অপূর্ব সুন্দর এই মসজিদটির নির্মাণকাজ প্রায় সবাইকেই মুগ্ধ করবে। মসজিদটির নির্মাণকাজ কবে শুরু হয়েছিল তা সঠিক জানা না গেলেও, এর স্থাপনাকাজ ২০১৭ সাল নাগাদ শেষ হয়েছে বলে এলাকাবাসীরা মতামত দেন। একতলা এই মসজিদটিতে একসাথে সাড়ে ৬০০ জন একত্রে জামাআতের সহিত নামাজ আদায় করতে পারেন। বাংলাদেশ ডেভোলাপমেন্ট কোম্পানীর তত্ত্বাবধানে তৈরি এই মসজিদ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। এই মসজিদ দালানটিতে প্রবেশের জন্য প্রধান ফটক আছে ৩টি। চারপাশের অবস্থিত বড় বড় জানালাগুলো ভাল ভেন্টিলেশনের কাজ করে। এর প্রধান গম্বুজটি দালানের উপরে মাঝের অংশে স্থাপিত ও এর আশেপাশে রয়েছে আরও ২০টির অধিক শাখা গম্বুজ। শখা গম্বুজগুলো ছোট মিনারের আকৃতির স্তম্ভের উপর বসানো হয়েছে। মসজিদটির ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনও খুবই সুন্দর। মেঝ দৃষ্টিনন্দন টাইলস দিয়ে মোড়ানো হয়েছে। বর্তমানে মসজিদটির চারপাশের কাশবনের সমাহার আপনাকে মুগ্ধ করবে। কেরানীগঞ্জের সাউথ টাউন আবাসিক প্রকল্পের ভিতরে অবস্থিত মসজিদটির আশেপাশে কোন জনবসতি এখনও সেরকমভাবে গড়ে উঠেনি। যার জন্য অন্য সকল নামাজের ওয়াক্তে মসজিদটি প্রায়ই বন্ধ থাকে এবং খোলা থাকলেও সেরকম লোক সমাগম হয়না। তবে মসজিদের খাদেম হাফেজ জহিরুল ইসলাম মনে করেন যে, আবাসিক এলাকার উন্নয়নের সাথে সাথে এখানে নামাজের জন্য লোক সমাগমও বাড়বে। কিন্তু এখানে জুম্মার নামাজ আদায় করার জন্য অনেক মুসল্লি অনেক দুর-দুরান্ত থেকে এসে থাকেন। জুম্মার নামাজ আদায়ের পাশাপাশি তারা এই মসজিদের স্থাপত্ব সৌন্দর্য ও এর আশাপাশের পরিবেশ উপভোগ করেন।
সাউথ টাউন জামে মসজিদ।
মসজিদের চারপাশের কিছু দৃশ্য।
যেভাবে যাবেন
প্রথমে আপনাকে ঢাকার গুলিস্তানে পৌঁছে বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে পৌঁছাতে হবে। রাজেন্দ্রপুরে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সামান্য কিছু দূরেই চোখে পড়বে সাউথ টাউন আবাসিক প্রকল্পের প্রধান ফটক। সেখান থেকে ৮-১০ মিনিট হেঁটে ভিতরে ঢুকলেই মসজিদটি দৃশ্যমান হবে।
শ্রীপুর মসজিদ, গাজীপুর
হাজী আব্দুস সাত্তার দারুল উলুম জামে মসজিদ ওরফে শ্রীপুর মসজিদ গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার ভাংনাহাটি এলাকায় অবস্থিত। এর প্রতিষ্ঠাতা ব্যবসায়ী হাজী আব্দুস সাত্তারের নিজস্ব অর্থায়নে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে এবং এর সমাপ্তি ঘটে ২০১৬ সাল নাগাদ। প্রথমে ভারতীয় এক প্রকৌশলীর দ্বারা এর নকশা করা হয় এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশী প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে এর তৈরির কাজ সম্পন্ন করা হয়। জানা যায় যে, মসজিদটি তৈরিতে প্রায় ৮০ কোটি টাকার অধিক খরচ হয়েছে এবং পুরো চার বিঘা জমি জুড়ে এর প্রাঙ্গন বিস্তৃত। সম্পূর্ণ মসজিদ প্রাঙ্গনের চারপাশ দেয়াল দিয়ে ঘেরা ও মূল ফটকের পাশের দেয়ালগুলোতে দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ বিদ্যমান। আগ্রার তাজমহলের ন্যায় এই সম্পূর্ণ মসজিদ ভবনটি মার্বেল পাথরের তৈরি। ভবনটির নির্মাণকৌশলী সবাইকে মুগ্ধ করে এবং এর প্রতি সবাইকে আকর্ষণ করে। এর নির্মাণকৌশলী আরব দেশের বিখ্যাত মসজিদগুলোর চেয়ে কোন অংশে কম নয়। এর দুপাশের মাঠ সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়ানো ও চারপাশে রয়েছে অসংখ্য ফলের গাছ। মসজিদটির ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন খুবই মনোমুগ্ধকর। এর মেঝ ও পিলারে মার্বেল পাথরের টাইলস ব্যবহৃত হয়েছে। মসজিদের ভেতরে মার্বেল পাথরে খচিত সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াত লেখা রয়েছে। মসজিদের প্রধান ফটকের উপর কারুকাজ করা ৩টি গম্বুজ বিদ্যমান এবং মূল ভবনের সামনে ২টি উঁচু মিনার বিদ্যমান। মূল ভবনের উপর নীল রঙের ৩টি গম্বুজ পাশাপাশিভাবে স্থাপন করা হয়েছে। এখানে নিয়মিত নামাজ ও জুম্মার নামাজের পাশপাশি ঈদের নামাজও মুসল্লিরা আদায় করে থাকেন। এর পাশে একটি মাদ্রাসা ভবন রয়েছে।
হাজী আব্দুস সাত্তার দারুল উলুম জামে মসজিদ।
মসজিদ ভবনের প্রধান ফটক।
মসজিদের চারপাশের কিছু দৃশ্য।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়েতে মাওনা ফ্লাইওভার থেকে পূর্বদিকের রাস্তা ধরে ৫ কিঃমিঃ এগিয়ে গেলেই হাতের ডানে মসজিদটি চোখে পড়বে। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে নেত্রকোণা বা ময়মনসিংহ গামী যেকোনো বাসে মাওনা চৌরাস্তা নেমে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যেতে হবে। মহাখালী থেকে ময়মনসিংহের বাসে উঠে মাওনা যেতে পারবেন।
গুঠিয়া মসজিদ, বরিশাল
বাইতুল আমান জামে মসজিদ ওরফে গুঠিয়া মসজিদ বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া গ্রামে অবস্থিত। বরিশাল শহর থেকে ইহা মাত্র ২২ কিমি দূরে। এটি একই সাথে জামে মসজিদ এবং ঈদগাহ কমপ্লেক্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ঈদের সমর প্রায় ২০ হাজার জন লোক এখানে একত্রে নামাজ আদায় করতে পারে। প্রায় ১৪ একর জমির উপর এর স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এস. সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু ২০০৩ সালে এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে মসজিদ-ঈদগাহ্ কমপ্লেক্স এর নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেন। ২০০৬ সাল নাগাদ এর সকল নির্মাণ কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘটে। এই মসজিদ কমপ্লেক্সে মসজিদ ছাড়াও একটি এতিমখানা, একটি সুবিশাল পুকুর ও একটি ডাকবাংলো রয়েছে। এর স্থাপত্যকলা সম্পর্কে আমার আর নতুন করে বলার কিছু নেই। যারা বরিশাল ভ্রমণে যান, তাদের ভ্রমণতালিকাতে এ মসজিদ দর্শন করা সবসময় থাকে। মসজিদটি দেখতে এত সুন্দর যে, এখানে আসার পর মহান আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান আরও বৃদ্ধি পায় বলে আমার কাছে মনে হয়। যদিও এই মসজিদ মানবসৃষ্ট, কিন্তু আল্লাহর বিশেষ কুদরত দ্বারা এর নকশাকারী এত সুন্দর নকশা করতে সক্ষম হয়েছেন বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। মসজিদের প্রধান গম্বুজটি সুন্দর কারুকাজ দ্বারা সমৃদ্ধ।মাঝখানে অবস্থিত এই গম্বুজটির চারপাশে আরও ৪টি শাখা গম্বুজ আছে। সম্পূর্ণ মসজিদ এবং ঈদগাহ কমপ্লেক্সটি দেয়াল দিয়ে ঘেরা ও চারকোণা দেয়ালের প্রতিটি কোণে কারুকাজ সম্বলিত একটি করে গম্বুজ বিদ্যমান। মসজিদ ভবনের এর প্রধান ফটকে তিনটি দরজা রয়েছে। ফটকের সামনের রাস্তাটি দেখলে মনে হবে যেন এক ইটের তৈরি কার্পেট। মসজিদ সংলগ্ন একটি মিনার রয়েছে যার উচ্চতা ১৯৩ ফুট। রাতের বেলা এর দৃশ্য খুবই অপূর্ব সুন্দর। তখন আপনি একে আবুধাবিতে অবস্থিত শেখ আবু জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদের দৃশ্যের সাথে তুলনা করতে পারেন। মসজিদ ভবনের চারপাশে কয়েকটি ফুলের বাগান রয়েছে যা মসজিদের পরিবেশকে আরও মনোরম করে তোলে। ভবনের ইন্টেরিয়র ডিজাইনও দেখার মত সুন্দর। প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে লোকজন আসে সুন্দর এই আল্লাহর ঘরটিকে একনজর দেখার জন্য।
গুঠিয়া মসজিদ, বরিশাল।
মসজিদ আঙিনা ও এর আশপাশ।
মসজিদের ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন।
রাতের দৃশ্য।
যেভাবে যাবেন
বরিশাল পৌঁছে আপনাকে স্বরূপকাঠি বা বানারীপাড়ার বাসে উঠলেই আপনি চলে যেতে পারেন মসজিদ কমপ্লেক্সটিতে। আপনি চাইলে শেয়ারে বা প্রাইভেট সিএনজি অটোরিকশা করে সেখানে যেতে পারেন।
গুলশান সোসাইটি মসজিদ, ঢাকা
রাজধানী ঢাকার অভিজাত্যপূর্ণ এলাকা গুলশানে এর অবস্থান। ২০১৭ সাল নাগাদ নির্মিত এই মসজিদটি প্রকৌশলী কাশিফ মাহবুব চৌধুরীর একটি সুনিপুণ নকশার বাস্তবায়ন। বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপের তত্ত্বাবধানে এই মসজিদটি ৭৮১ বর্গমিটার জায়গার উপর নির্মাণ করা হয়। সাত তলা বিশিষ্ট এই মসজিদ ভবনে নেই কোন গম্বুজ বা নেই কোন মিনার। কিন্তু এই ভবনের নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যে, আপনি এর যেকোন পাশকে দূর থেকে ভালভাবে লক্ষ্য করলে আপনি একটি মিনারের ছবি বা নকশা স্পষ্টত দেখতে পাবেন। মসজিদটি সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা না থাকলে, দূর থেকে দেখে আপনি একে যাদুঘর কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ভবন মনে করতে পারেন। ভবনের চতুর্দিকের দেয়ালগুলোতে প্রায় একই নকশা বিদ্যমান। জালের মত নির্মিত দেয়ালের পিছনে রয়েছে কাঁচের প্যানেল যা দূর থেকে দৃশ্যমান। এর প্রধান ফটকের সামনে রয়েছে অনেকগুলো সিঁড়ি এবং এর প্রথম তলা রাস্তা থেকে অনেকটা উঁচুতে অবস্থিত। এর ইন্টেরিয়র ডিজাইনিইংয়েও রয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এর কাঁচের প্যানেল দিয়ে দিনের বেলা পর্যাপ্ত আলো সঞ্চালনের ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে যায়। রাতের বেলা যখন এর ভেতরের বৈদ্যুতিক বাতিগুলো জ্বলে ওঠে, তখন বাইরে থেকে ভবনটিকে দেখতে অসাধারণ লাগে।পুরো মসজিদ ভবনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। উপরের তলায় উঠবার জন্য লিফটের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রায় ৪৫০০ জন মুসল্লি এখানে একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন।
গুলশান সোসাইটি মসজিদ।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার গুলশান-২ এলাকায় পৌঁছে সেখান থেকে ৬৩ নম্বর রোডে চলে যাবেন। সেখানে অবস্থিত লেকটির পশ্চিম পাশে মসজিদের অবস্থান। আপনি গুলশান-২ হতে রিকশাযোগে সহজে সেখানে পৌঁছাতে পারবেন।
বাইতুর রউফ মসজিদ, ঢাকা
ঢাকার উত্তরা দক্ষিনখান এলাকার ফায়দাবাদে অবস্থান এই মসজিদটির। ২০১২ সালে নির্মিত এই মসজিদটি অনেক ঢাকাবাসীদের নিকট এখনও অজানাই রয়ে গেছে, কারণ এর অবস্থানের জন্য। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এর আওতামুক্ত দক্ষিনখান এলাকায় সাধারণত স্থানীয় এলাকাবাসী ছাড়া অন্য কেউ সেখানে কখনই কোন বিশেষ কাজ ছাড়া যায় না। তাছাড়াও আমি যখন সেখানে সর্বশেষ গিয়েছিলাম, রাস্তাঘাট এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এখন কি অবস্থা তা আমার জানা নেই। তবুও এরকম একটা এলাকায় যে এত সুন্দর মসজিদ নির্মাণ হয়েছে, সেটা দেখেই আমি অনেক অবাক হয়েছি। ৭৫৪ বর্গমিটার আয়তনের ‘বাইতুর রউফ’ মসজিদটির বিশেষত্ব হলো এতে কোন ডোম বা মিনার নেই। কেননা ইট এখানে প্রধান কাঠামো ধারক নয়, কাঠামোটি চতুর্দিকে আটটি কলামের ওপর বসানো। স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের কারণে এ মসজিদে যেমন ঝকঝকে রোদের দেখা মেলে, তেমনি বিশেষ বাতাস চলাচল ব্যবস্থা এখানকার তাপমাত্রা রাখে নিয়ন্ত্রিত। প্রাকৃতিক আলোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকায় দিনে কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন হয় না। মসজিদ এর ছাদে অনেক ছোট ছোট গোলাকার ছিদ্র করা হইয়াছে যাতে সূর্যের আলোর মাধ্যমে মসজিদের ভিতর এ পর্যাপ্ত আলো আসে। এমন ভাবে এই নকশা করা হয়েছে যাতে ওই ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির পানি ভিতরে না আসে। প্রকৌশলী মেরিনা তাবাসসুম এই মসজিদ ভবনটির নকশা ডিজাইন করেন। এই নির্মিত প্রকল্পের জন্য ২০১৬ সালে তিনি “আগাখান স্থাপত্য পুরস্কার ” লাভ করেন। তার মতে ” আপনি একটি খুব সহজ উপাদান নিতে পারেন এবং আপনার নিজের সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনের ক্রিয়া দ্বারা আপনি যে কোনও স্তরে এটি নিতে পারেন “।তিনি আরও জানান যে, দেশে এখন এমন ভবন তৈরি হয় যার ফলে বিদ্যুৎ খরচ হয় প্রচুর। স্থাপত্য করার সময় এসব বিষয় ভাবতে হবে। কারণ আজ যা ট্রেন্ডি, পাঁচ-দশ বছর পর তা আর থাকবে না। তখন এসব স্থাপত্য তার আবেদন হারাবে। স্থাপত্য শুধুই দেখার বিষয় নয়, অনুভবের বিষয়। এই মসজিদে প্রতি জামাতে ৫০০-৬০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। এ ধরনের পরিবেশবান্ধব স্থাপত্য সত্যিই প্রশংসনীয়।সকল নির্মাণসামগ্রীও আমাদের দেশের বলে জানা যায়।
বাইতুর রউফ জামে মসজিদ।
যেভাবে যাবেন
এই মসজিদটি স্থানীয় এলাকাবাসীরা ” লাল মসজিদ ” নামে চিনেন। প্রথমে আপনাকে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর পৌঁছে রাস্তার পূর্ব পাশের বেড়িবাঁধ রোডে ঢুকে রিকশা নিয়ে ট্রান্সমিটার মোড় যেতে হবে। সেখানে গিয়ে স্থানীয় কাউকে লাল মসজিদের কথা বললেই তারা আপনাকে পথ চিনিয়ে দিবে।
আল-মদিনা জামে মসজিদ, মুন্সিগঞ্জ
মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগরে অবস্থিত এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদটির। ২০১৫ সাল নাগাদ এই মসজিদের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় এবং একই সালে এখানে প্রথম জামাআত অনুষ্ঠিত হয়। এখানে প্রায় ১৭০০ জন লোক একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। প্রায় ৩০ শতক জায়গার উপর এর স্থাপনা গড়া হয়। মসজিদের ছাদের ওপর বড় একটি গম্বুজসহ রয়েছে দুটি লম্বা মিনার ও চারটি ছোট মিনার। সম্মুখভাগের উপরেও দুটি মিনারের অবস্থান রয়েছে। মূল ফটকের সামনের দেয়াল ও পিলারগুলোতে দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ বিদ্যমান যা সবারই নজর কাড়বে। ফটকের দরজা দুটি কাঠের তৈরি। ফটক দিয়ে প্রবেশের পর আপনার চোখে পড়বে দুপাশের সিঁড়ি যা উপরতলায় উঠে গিয়েছে। এরপর সামনের মূল অংশে আগালে দেখতে পাবেন সুন্দরভাবে সাজানো একটি মিহরাব। মূল অংশের উপরের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন মসজিদের একমাত্র গম্বুজের গঠন এবং এর কেন্দ্রবিন্দু থেকে নিচতলা বরাবর নেমে এসেছে একটি সুদর্শিত ঝাড়বাতি। গম্বুজের গোলাকার অংশের ঠিক নিচে ২০ টি জানালা বসানো হয়েছে, যার মাধ্যমে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করে। মসজিদের পাশে একটি মাদ্রাসা রয়েছে, যেখানে অসংখ্য ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের আনাগোনা নজরে পড়বে।
আল-মদিনা জামে মসজিদ।
মসজিদের এদিক ওদিক এবং ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের ষোলঘর এবং শ্রীনগর বাস স্টান্ড এর মাঝামাঝি স্থান ছনবাড়ি এলাকায় রাস্তার পশ্চিম পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই মসজিদ। গাড়ীতে বা বাসে বসে থেকেই রাস্তার পাশে দেখতে পাবেন চমৎকার এই মসজিদটিকে। তাই ঢাকার গুলিস্তান থেকে উঠে যান মাওয়াগামী যেকোন বাসে।
বেলাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, নরসিংদী
নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলায় অবস্থিত এই মসজিদটি আসলে প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্ত বর্তমান সময়ে মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষভাবে মসজিদের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করারা জন্য, এর পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। নরসিংদী জেলার বিশিষ্ট শিল্পপতি, শিক্ষানুরাগী, ও সমাজসেবক আলহাজ্ব আব্দুল কাদির মোল্লা, চেয়ারম্যান, থার্মেক্স গ্রুপ, নরসিংদী কর্তৃৃক বর্তমান অবকাঠামোটি নির্মিত হয়। কিন্তু এর প্রথম প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদাতা ছিলেন জনাব মাহমদ ব্যাপারী, সাং বীরবাঘবের। মসজিদটি যখন প্রথম নির্মিত হয়, তখনই এই মসজিদটি অত্র এলাকার অন্য মসজিদ থেকে ভিন্ন কাঠামোর ছিল। এই মসজিদটি প্রথম নির্মাণের সময় এর সাতটি গুম্বুজ ছিল বলে জানা যায়। কিন্তু পুনঃনির্মাণের ফলে তা এখন নেই। মসজিদের পিছন দিকে একটি জলাশয় রয়েছে এবং সেই জলাশয়ের জলে মসজিদ ভবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে অসাধারণ লাগে। বর্তমানে পুরো ভবনটি সিরামিক ইট দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। এর প্রথম তলার বর্ধিত অংশে দুটি মিনার যেন উন্মুক্ত দ্বারের মত দাঁড়িয়ে আছে এবং মিনারগুলোর উপরে গম্বুজও বসানো হয়েছে। এর ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনে মেঝের পাশাপাশি ভেতরের পিলারগুলোও দৃষ্টিনন্দন টাইলস দ্বারা ঘেরাও করা হয়েছে । প্রতিটি পিলারের মাঝখানে দৃষ্টিনন্দন ঝাড়বাতি স্থাপন করা হয়েছে। মসজিদের ভেতরের উপরতলা থেকে নিচতলা অবধি মাঝ বরাবর স্থাপন করা হয়েছে বড় এক ঝাড়বাতি। তিন তলা বিশিষ্ট এই মসজিদের বর্তমান ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৮০০০ জন হলেও অন্যান্য বিশেষ সময়ে এখানে প্রায় ২০-২২ হাজার জন মুসল্লি একত্রিত হয়। বর্তমান কাঠামোতে মসজিটির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এর নির্মাণ শৈলী সকলকে মুগ্ধ করে। এই মসজিদটি বর্তমানে বেলাব উপজেলার একটি দর্শনীয় স্থান। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এক নজর এই মসজিদটিকে দেখবার জন্য আসে।
বেলাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।
যেভাবে যাবেন
প্রথমেই আপনাকে পৌঁছাতে হবে নরসিংদী জেলায়। এরপর নরসিংদী জেলা শহর থেকে বেলাব উপজেলায় বাসে কিংবা সি এন জি করে পৌঁছাতে পারেন।ভাড়া পর্যায়ক্রমে ২৫ এবং ৩০ টাকা। তারপর বেলাব উপজেলা রিকশা ভাড়া করে বেলাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ যেতে পারেন।
হাক্কানী জামে মসজিদ, নোয়াখালী
নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার ৬নং কাবিলপুর ইউনিয়নে অবস্থিত হাক্কানী জামে মসজিদ।এটি চট্রগ্রাম বিভাগের মধ্যে ব্যায়বহুল ও সৌন্দর্যময় মসজিদ বলে পরিচিত। সৌন্দর্য ও বিশালতায় এটি বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম মসজিদ। এই মসজিদটি বর্তমান সময়ে পুনঃনির্মিত একটি মসজিদ যা ৮০’র দশকের প্রথম দিকে খুব ছোট পরিসরে নির্মিত হয়। তখন এর মূল প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হাশেম সওদাগর। পরবর্তীতে আবুল খায়ের গ্রুপ কোম্পানীর অর্থায়নে ২০০৭ সালে মসজিদটির পূনঃনির্মাণ শুরু করা হয়ে ২০১০ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। মসজিদটি নির্মাণে প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যায় হয়েছে বলে জানা যায়। নজরকাড়া এই মসজিদটি দূর থেকে এক নজর পড়লে কাছ থেকে একে দেখার জন্য প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি হয়। দূর থেকে একে অনেকটা তাক মহলের মতন দেখায়। চতুষ্কোণ আকৃতির মসজিদে রয়েছে মোট ৪টি সুউচ্চ মিনার যা মসজিদের মূল ৪টি পিলার বরাবর উপরে উঠেছে এবং রয়েছে মাঝখানে একটি মূল গম্বুজ ও তার দুপাশে মোট ৩টি শাখা গম্বুজ। মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নতমানের উপকরণ। মসজিদের উত্তর পাশে দু’তলা বিশিষ্ট একটি মাদ্রাসা এবং পূর্ব পাশে বিশাল ঈদগাঁহ রয়েছে । মসজিদটির ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের বিশেষত্ব হল যে, এর প্রতিটি তলার ছাদেও রয়েছে বিশেষ কারুকার্যের ছোঁয়া এবং প্রতিটি ছাদ বিশেষভাবে মোজাইক করা। এর প্রধান ফটকসহ সামনের সম্পূর্ণ অংশ কারুকার্যমন্ডিত। প্রধান ফটকের উপরে বিভিন্ন আরবী লেখার পাশাপাশি আরবী ক্যালিওগ্রাফির ন্যায় বাংলাতে মসজিদের নাম খোদাই করে লেখা হয়েছে। মসজিদটির পাশেই তৈরি করা হয়েছে বড় বড় কয়েকটি স্টল। রয়েছে গাড়ি পাকিং করার সুব্যবস্থা। স্টলগুলোতে প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার দুপুরে আবুল খায়ের গ্রুপ কোম্পানীর অর্থায়নে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটক ও গরীব, অসহায় দুঃস্থদেরকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৩ তলা বিশিষ্ট মসজিদটি দেখতে এবং এ মসজিদে নামাজ পড়তে ভিড় জমান জেলা শহরসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা।
হাক্কানী জামে মসজিদ।
যেভাবে যাবেন
প্রথমে নোয়াখালী জেলায় পৌঁছে আপনাকে সেখান থেকে সি এন জি করে পৌঁছাতে হবে সেনবাগ উপজেলার কাবিলপুর গ্রামে। সেখানে গিয়ে এলাকাবাসীদের সওদাগর বাড়ি মসজিদের কথা বললেই, তারা আপনাকে পথ দেখিয়ে দেবে।
মা আয়েশা (রা:) জামে মসজিদ, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার ধুতুরাবাড়ি গ্রামে প্রায় ইছামতি নদীর তীরে এই মসজিদটির অবস্থান। পাটুরিয়া ঘাটের খুবই সন্নিকটে এর অবস্থান। হযরত আয়েশা(রাঃ) এর নামানুসারে এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন উক্ত এলাকার স্বনামধন্য ব্যাক্তি আফতাব উদ্দিন খান যিনি পেশায় একজন প্রকৌশলী। ২০০৮ সাল নাগাদ এর নির্মাণকাজ শুরু করা হয় এবং ২০১২ সালে এর সমাপ্তি ঘটে যাতে প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানা যায়। এটি মানিকগঞ্জ জেলার সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ বলে পরিচিত। প্রায় ৮ বিঘা জায়গার উপর নির্মিত এই মসজিদটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর প্রতীক বহন করছে। চতুষ্কোণ আকৃতির মসজিদটির তিনদিক সবুজ বাগানে ঘেরা। মসজিদের প্রধান গেইটটি যেন এক রাজদুয়ার এবং এর গেইটসহ সম্পূর্ণ ভবনে ইটের দেয়াল রাখা হয়েছে আস্তরনহীন ভাবে । মূল ভবনের সামনে আপনাদের সবার চোখে পড়বে একটি একটি ত্রিভুজ আকৃতির খোলা ময়দান যা সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়ানো। এর উত্তর-পূর্ব কোণে চোখে পড়বে একটি সুউচ্চ মিনার যা প্রায় ৯৯ ফিট লম্বা এবং এটি ঢাকা – পাটুরিয়া মহাসড়ক থেকে দৃশ্যমান। মূল ভবনের প্রধান ফটকটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির এবং এর উপরে রয়েছে বড় একটি গম্বুজ। খানিকটা দূর থেকে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, এই গম্বুজ এবং অর্ধচন্দ্রাকৃতির ফটকের একটা দারুণ কম্বিনেশন রয়েছে। মসজিদের ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন একদম সাদামাটা, কিন্তু ভিতরে প্রচুর আলো বাতাস সঞ্চালনের ব্যবস্থা রয়েছে। চারদিকের জানালাগুলো প্রায় একতলা সমান লম্বা এবং গম্বুজের মাঝ বরাবর একটি ছিদ্র রাখা হয়েছে যার ফলে দিনের বেলা মসজিদটিকে প্রায় উন্মুক্ত মনে হয়। মসজিদটির তিনদিকে আছে বাগান সংলগ্ন করিডোর যেখানে নামাজ পড়ার সুব্যবস্থা আছে। মসজিদটি প্রায় ৫০০ জন লোকের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন, তবে ঈদের সময় প্রায় ১০০০ জন লোক এখানে নামাজ আদায় করতে পারেন।
মা আয়েশা (রা:) জামে মসজিদ।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ জেলার পাটুরিয়া ঘাটে যাওয়ার আগে ধুতুরাবাড়ী চৌরাস্তা নেমে ১০০ গজ পূর্বে হযরত মা আয়শা রঃ জামে মসজিদটি অবস্থিত। উক্ত রুটে যেকোন বাসযোগে এখানে পৌঁছানো সম্ভব।
নিজাম-হাসিনা ফাউন্ডেশন মসজিদ, ভোলা
ভোলা জেলার জেলা শহরের উকিলপাড়াতে অবস্থিত এই মসজিদটি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ অত্যাধুনিক মসজিদ বলে পরিচিত। প্রায় দেড় একর জমির ওপর নিজাম-হাসিনা ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায় মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। ২০১০ সালের জুন মাস থেকে এ মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর শুক্রবার জুমআর নামাজ আদায়ের মাধ্যমে এ মসজিদটির উদ্বোধন করা হয়। মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন বেসরকারি বীমা কোম্পানি মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তিনি ও তার স্ত্রী বেগম হাসিনা বেগম ২০০০ সালে নিজাম-হাসিনা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা করেন। এই মসজিদটি সম্ভবত সমগ্র বাংলাদেশের সকল মসজিদগুলোর চেয়ে আলাদা, এমনকি গুলশান সোয়াইটি মসজিদ এবং বাইতুর রউফ মসজিদ থেকেও আলাদা। মসজিদের মূল ভবনটি ত্রিভুজাকৃতির পিরামিডের ন্যায় তৈরি। এর ভবনের উপরে এর ৬০ ফুট উচ্চতার গম্বুজটি ত্রিভুজাকৃতির এঙ্গেলের মধ্যে বসানো হয়েছে যা সকলেরই নজর কাড়বে। এই মসজিদটির নকশা তৈরি করেন আর্কিটেক্ট ফোরামের ডিজাইনার কামরুজ্জামান লিটন। এর মূল গেইটটিও মসজিদ ভবনের মত ত্রিভুজাকৃতির এবং এর উপরে ছোট একটি গম্বুজ বসানো হয়েছে। গেইটের দুদিকে বর্ধিত দেয়াল এবং দেয়ালগুলোর শেষ প্রান্তে দুটি লম্বা মিনার স্থাপন করা হয়েছে যার এক একটির উচ্চতা প্রায় ১২০ ফুট এর মত। গেইটের সামনে দুধারে ফুলের বাগান রয়েছে। দুইতলা বিশিষ্ট এই মসজিদের ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং এ নানা রঙয়ের মার্বেল পাথরসহ বিভিন্ন পাথরের কারুকাজ এবং আরবি ক্যালিওগ্রাফির বিভিন্ন লেখা রয়েছে। এছাড়াও মসজিদের সাথে এখানে রয়েছে একটি লাইব্রেরি ও হেফজখানা। এই মসজিদে একসঙ্গে ২ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন এবং এখানে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা অজুখানা এবং নামাজের ব্যবস্থাও রয়েছে। পাশাপাশি এ মসজিদে এসি ও আধুনিক অজুখানা ছাড়াও সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদানে জেনারেটর ব্যবস্থা রয়েছে। সৌর্ন্দয্যমন্ডিত মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে ভীড় জমান।
নিজাম-হাসিনা ফাউন্ডেশন মসজিদের ইতিবৃত্ত।
যেভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকা কিংবা বরিশাল হতে ভোলাগামী লঞ্চে ভোলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত যেতে হবে প্রথমে। তারপর ঘাট থেকে অটোতে করে ভোলা সদরের উকিল পাড়া। সেখানে গিয়ে সামান্য খোঁজ করলে পৌঁছে যেতে পারবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।
এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে নির্মিত হচ্ছে অসংখ্য সুন্দর সুন্দর মসজিদ, যার কোনটি ঐতিহাসিক স্থাপনার আদলে ও কোনটি সম্পূর্ণ আধুনিক নির্মাণশৈলীর আদলে নির্মিত হচ্ছে। যেমন টাঙ্গাইল জেলার ২০১গম্বুজ মসজিদের কথা না বললেই নয় যা ইতিমধ্যে গিনিজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডবুকে জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু মসজিদটি এখনও সম্পূর্ণভাবে নির্মিত হয়নি, কিছু কাজ এখনও বাকি আছে। তাই এই মসজিদ নিয়ে কথা হবে অন্যদিন এবং আল্লাহর হুকুমে বেঁচে থাকলে হয়তো আরও সুন্দরকিছু মসজিদ দেখার অভিজ্ঞতা হবে বা এ সম্পর্কে জানতে পারবো।
অবশেষে বলতে চাই যে, যেখানেই ভ্রমণ করুন না কেন সবসময় খেয়াল রাখবেন আপনার জন্য পরিবেশ যাতে নোংরা না হয়। পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের সর্বদা সচেতন থাকা উচিত। আর এমন কোন কাজ করবো না যাতে, বাংলাদেশীদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।
So, travel more & be happy. Always remember that your mobility is your freedom.
ছবিসূত্রঃ ধারণকৃত এবং সংগৃহীত।