লাংকাউই – মালয়েশিয়ার একটি শান্ত ও কোলাহল মুক্ত দ্বীপের ইতিকথা।

আমি আমাদের কথা চিন্তা করে বলছি। আমরা একটি জনবসতিপূর্ণ দেশে বসবাস করছি, যেখানে মানুষের কোলাহল একটি আমাদের কাছে একদম স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। এই কোলাহল এবং নানারকম গ্যাঞ্জামের সাথে আমাদের প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলতে হয় আমাদের। তাই স্বাভাবিক ভাবেই আমরা চাই যে, ছুটির দিনগুলোতে চলে যাই নিরিবিলি ও কোলাহল মুক্ত কোন জায়গায় যেখানে শান্তিতে কিছুদিন কাটাতে পারবো। আমাদের দেশে এরকম জায়গার খুবই অভাব, কেননা ছুটির সময় আমাদের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের খুবই ভিড় থাকে। সেজন্যই, অনেকে এখন ছুটি কাটাতে পাড়ি জমান বিদেশে। বিদেশে আমাদের পছন্দের জায়গাগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার বালি, থাইল্যান্ডের পাতায়া ও ফুকেট, মালয়েশিয়ার পেনাং ও গেন্টিং হাইল্যান্ড, নেপাল ও ভারতের কিছু জায়গা ইত্যাদি আমাদের তালিকায় থেকে থাকে। কিন্তু সেসকল স্থানেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমান, তাই সেখানেও একরকম মানুষের কোলাহল থাকে। তাই ভিড় ও কোলাহল মুক্ত পরিবেশে ঘুরে আসতে চাইলে যেতে পারেন মালয়েশিয়ার লাংকাউই দ্বীপে।

PicsArt_03-22-07.27.46

লাংকাউই , মালয়েশিয়া।

লাংকাউই, মালয়েশিয়ার উত্তর-পশ্চিম উপকুল থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি জেলা যা আন্দামান সাগরের প্রায় ১০০ টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। সমুদ্র তীরবর্তী এই অঞ্চলটি মালয়েশিয়ার কেদাহ্ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত, যা The Jewel of kedah নামে পরিচিত। লাংকাউই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র এবং আমার দেখা অনুযায়ী এটা দক্ষিণ- পূর্ব  এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে শান্ত ও নিরিবিলি একটি সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল। তাই ঘুরে আসতে পারেন এর দর্শনীয় স্থানগুলো এবং উপভোগ করতে পারেন এর শান্ত পরিবেশকে। লাংকাউইতে দর্শনীয় স্থানের কোন অভাব নেই। সকল টুরিস্ট স্পট দেখা হবে সময় ও ব্যয়বহুল। তাই উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোর কথা এখানে উল্লেখ করছি, যতটা জায়গা আমি দেখেছি এবং যতটা জায়গা সম্পর্কে শুনেছি ।

IMG_20190105_151912

বিমানের জানালায় লাংকাউই দর্শন ।

লাংকাউই এর সমুদ্র সৈকতসমূহ

সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল হওয়ায় এখানকার প্রধান আকর্ষণ যে এর সমুদ্র সৈকতসমূহ হবে তা আর বলার বাকি থাকে না। লাংকাউইতে প্রচুর সমুদ্র সৈকত রয়েছে যা গুনে শেষ করার মত নয়। এটা অনেকটা ইন্দোনেশিয়ার বালির মত। এখানে ওখানে সমুদ্র সৈকত বিদ্যমান যা পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। এই সৈকতগুলোর মধ্য পেনতাই চেনাং, পেনতাই তেনগাহ, ব্ল্যাক স্যান্ড বিচ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  আপনি যেখানেই যান না কেন, সেখানেই আপনি কোন না কোন সমুদ্র সৈকতের দেখা পাবেন।

IMG_20190106_132707

পেনতাই চেনাং বিচের অভিমুখে।

পেনতাই চেনাং ও পেনতাই তেনগাহ বিচ হল লাংকাউই এর সবচাইতে জনপ্রিয় বিচ। এখানে পর্যটকদের ঢল একটু বেশি। কিন্তু তারপরও বিচগুলো খুবই শান্ত ও হৈচৈ মুক্ত। ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত। কারণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিচগুলোতে কোলাহল থাকাটাই সৌন্দর্য। কিন্তু এখানে আমি দেখলাম যে, যে যার মত ঘুরছে, পানিতে নামছে, কেউ সূর্যস্নান করছে, কিন্তু কোথাও কোন হৈ হুল্লোড় দেখলাম না। কাবাবে হাড্ডি বলতে, কিছু জেটস্কি ও স্পিড বোটের শব্দ যা একটু হচ্ছিল। সমুদ্র সৈকত এর বাইরে অবস্থিত অনেক দোকানপাট, শপিংমল ও রেস্টুরেন্টের সারি কিন্তু সেখানেও ভিড়াভিড়ি নেই, যদিও সেখানে যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ ছিল। যদিও মানুষের সংখ্যা ফুকেট কিংবা পাতায়াতে যেরকম থাকে তারচেয়ে অনেক কম ছিল। বলে রাখা ভাল যে, পেনতাই চেনাং ও পেনতাই তেনগাহ হল এখানকার মেইন টুরিস্ট এরিয়া । অধিকাংশ পর্যটকই এখানকার অবস্থিত হোটেলগুলোতেই অবস্থান করে থাকেন। এই এলাকায় সরু একটি ওয়ানওয়ে রাস্তা বিদ্যমান যেখানে দুপাশে অনেক গাড়ি পারকিং করা অবস্থায় থাকে এবং গাড়িগুলো এই রাস্তায় তুলনামূলক ধীরে চলে। কিন্তু কোথাও কোন হর্নের আওয়াজ নেই। যা আমার কাছে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও কুয়ালালামপুরের টুরিস্ট এরিয়াগুলির চেয়ে অনেক শান্ত মনে হয়েছে।

IMG_20190106_122747

পেনতাই চেনাং বিচ।

IMG_20190105_191157

চেনাং বিচে সূর্যাস্ত ।

IMG_20190106_124355

পেনতাই তেনগাহ বিচ।

IMG_20190107_155026

রাস্তার ধারে কোন এক অজানা সমুদ্র সৈকতে।

এছাড়াও ঘুরে দেখতে পারেন তেংকরাক বিচ, ব্ল্যাক সেন্ড বিচ, সার্ক বেই বিচ ইত্যাদি। তেংকরাক বিচে যাওয়ার পথে আপনাকে একটি পার্কের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে যা খুবই মনোরম। এবং বলে রাখা ভাল যে, বিচগুলোতে জেটস্কি সার্ফিং, প্যারাসেইলিং ও অন্যান্য বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। এগুলোর খরচ পরবে ৮০ থেকে ২০০ রিংগিতের মধ্যে। এখানে চাইলে আপনি দামাদামি করে নিতে পারেন। বিচগুলোর পাশে অনেক রেস্টুরেন্ট দেখতে পাবেন যেখানে নানা রকমের সীফুড বিদ্যমান। চাইলে সেখান থেকে লাঞ্চ বা ডিনার সেরে নিতে পারেন। খাবারের মান খুবই ভাল ও দামেও সুলভ।

লাংকাউই আন্ডারওয়াটার ওয়ার্ল্ড

সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে যাবেন অথচ সামুদ্রিক প্রাণীকূল সম্পর্কে জানবেন না তা কি হয়? না এর জন্য আপনাকে সাগরের নিচে ডাইভিং বা স্নোরকেলিং করতে হবে না। চলে যেতে পারেন পেনতাই চেনাং বিচের ধারে অবস্থিত আন্ডারওয়াটার ওয়ার্ল্ডে । এখানে ঢুকতে হলে জনপ্রতি ৪০ রিংগিত করে টিকিট কেটে ঢুকতে হবে।  এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন দৈত্যাকৃতির মাছসহ ক্ষুদ্র জলজ প্রাণীদের। এই ইন্ডোর একুরিয়ামটি বিশাল এবং এখানে সকল সামুদ্রিক প্রাণীর অস্তিত্ব বিদ্যমান। আন্ডারওয়াটার ওয়ার্ল্ডের গঠনটা এরকম যে, মনে হবে আপনি না মাছেরাই আপনাকে দেখছে। চারিদিকের দেয়াল ও উপরের ছাদ পুরোটাই একুরিয়াম দিয়ে ঘেরা এবং সেখানে জলজ প্রাণীদের বসবাস। জলজ প্রানী ছাড়াও, আপনি দেখতে পাবেন বিভিন্ন রকমের সরীসৃপ প্রাণী যেমন সাপ, কুমির ইত্যাদি ও নানা রকমের হাঁস ও বকপাখিদের। রয়েছে কিছু আর্টিফিশিয়াল ঝর্ণা ও ট্রপিকাল বাগান যেখানে গাছগুলো আসল।

আন্ডারওয়াটার ওয়ার্ল্ডে জলজ প্রাণীদের বিচরণ।

আর্টিফিশিয়াল ট্রপিকাল ফরেস্টের ভিতরে।

ওরিয়েন্টাল ভিলেজ, স্কাইক্যাব ও লাঙ্কাউই স্কাইব্রিজ

আমার কাছে লাংকাউই এর মূল আকর্ষণ হল লাংকাউই স্কাইব্রিজ। কিন্তু এখানে যেতে হলে প্রথমে আপনাকে পৌঁছাতে হবে ওরিয়েন্টাল ভিলেজে। ওরিয়েন্টাল ভিলেজ পৌঁছাবার পর আপনাকে চড়ে বসতে হবে স্কাইক্যাবে বা কেবল কারে চড়ে পাহাড়ের চূড়ায়। বলে রাখা ভাল যে, এখানে দুটো হিল স্টেশন রয়েছে। মিড স্টেশন ও টপ স্টেশন এবং মিড স্টেশনে গিয়ে আপনাকে কেবল কার চেঞ্জ করে টপ স্টেশন যেতে হবে আর সেখান থেকে স্কাইব্রিজে প্রবেশের টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। এবং টপ স্টেশনে যাবার পর কিছুদূর হাইকিং করার পর দেখা মিলবে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ঝুলন্ত স্কাইব্রিজের যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ছয়শ মিটার বা ২২০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এখান থেকে আপনি লাংকাউই এর ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ পাবেন। দেখা মিলবে দূরবর্তী সাগর, বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জ ও পাহাড়ের চূড়ার । ব্রিজের গঠনটি আপনাকে অবশ্যই ভয় পেতে বা চমকে যেতে বাধ্য করবে। যাদের হাইটফোবিয়া রোগ আছে, তাদের আমি বলবো যে সেখানে না যাবার জন্য। কিন্তু আপনি যদি থ্রিলিং প্রিয় হয়ে থাকেন, তবে জায়গাটি আপনার জন্য। এবং আপনার থ্রিলিং যাত্রায় বাড়তি মাত্রা যোগ করার জন্য রয়েছে ব্রিজের কাঁচের অংশগুলো , যার উপরে দাঁড়িয়ে নিচে তাকালে আপনি অবশ্যই একবারের জন্য হলেও ভয় পাবেন। আর কেবল কার রাইড তো আছেই যা খুবই রোমাঞ্চকর। স্কাইব্রিজ ছাড়াও টপ স্টেশনে  রয়েছে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত বিভিন্ন পয়েন্ট। এই পয়েন্টগুলো থেকে লাংকাউই এর খুবই সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। সকল টুরিস্টরা সেখানে ছবি ও সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকেন। সেখানে একটা লাভারস পয়েন্ট আছে। সেখানে কাপলসরা গিয়ে তাদের দুজনের নাম একটি তালায় লিপিবদ্ধ করেন এবং তা রেলিং এর এক ধারে তালাবদ্ধ করেন। সবার বিশ্বাস যে, এর ফলে তারা সারাজীবন এক হয়ে থাকবেন।  অনেকটা ফ্রান্সের বিখ্যাত লাভ লক ব্রিজের আদলে তৈরি। তাই যারা ফ্রান্স যেতে পারবেন না তারা এখানে আসতে পারেন এবং নিজের ভালবাসা প্রকাশ করতে পারেন। এছাড়াও টপ স্টেশনে কিছু খাবারের দোকান ও সুভেনিয়র শপ রয়েছে।

IMG_20190107_112515

স্কাইব্রিজ যাত্রার পথে ক্যাবল কার স্টেশনের সামনে।

কেবল কারে স্কাইব্রিজ যাত্রার পথে। 

হাইকিং টু স্কাইব্রিজ। ভিডিওতে দেখুন ভয়ংকর স্কাইব্রিজে উঠার মুহূর্ত ।

IMG_20190107_134429.jpg

স্কাইব্রিজ লাংকাউই।

IMG_20190107_134201

ব্রিজের সেই ভয়ংকর গ্লাস স্ট্যান্ড।

IMG_20190107_140134

লাভারস পয়েন্ট।

স্কাইব্রিজ থেকে ফেরাযাত্রার পথে কেবল কারে। ভিডিওতে দেখুন সেই মুহূর্ত।

স্কাইব্রিজ ঘুরাঘুরি শেষ হলে নিচে নেমে আপনি হেঁটে দেখতে পারেন ওরিয়েন্টাল ভিলেজকে। এটা মোটেও কোন গ্রাম নয়। এখানে বাড়িঘর দোকানপাটগুলো গ্রাম্য ধাঁচে তৈরি মাত্র। এখানকার গেটআপ অনেকটা সিংগাপুরের ইউনিভারসাল স্টুডিও এর মত। রয়েছে কিছু মুভিহল, বাচ্চাদের থিম পার্ক, থ্রিডি স্টুডিও, হোটেল আর রেস্টুরেন্ট ও শপিং সেন্টার তো আছেই। চাইলে এখান থেকে মানি এক্সচেঞ্জও করে নিতে পারেন। ঘুরে দেখবার জন্য এ স্থানটি অসাধারণ । আর হ্যাঁ বলে রাখা ভাল যে, এখান থেকেই আপনার কেবল কারে ওঠার টিকিট করতে হয়। এবং আরেকটা বিষয়ে আপনাদের জানানো ভাল যে, আবহাওয়া খারাপ বা বাতাসের গতি বেশি থাকলে কেবল কার বন্ধ থাকে। আবহাওয়া ঠিক হলে, তারপর চালু হয়। আমারও সেই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। যতক্ষন কেবল কার বন্ধ ছিল, ততক্ষন আমি ওরিয়েন্টাল ভিলেজের এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করেছি। আর যখন চালু হল, তখন লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে না থেকে স্পেশাল সার্ভিস নিয়েছি মোট ১১৫ রিংগিত খরচ করে যেখানে সাধারণত খরচ হতো ৪০ রিংগিত। আপনাদের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে। সবশেষে বলা ভাল যে, দিনের শুরুতে এখানে আসা ভাল এবং আপনার অর্ধেকদিন হাতে রাখতে হবে।

IMG_20190107_145152

ওরিয়েন্টাল ভিলেজের প্রবেশ দ্বার ।

থ্রিডি আর্ট গ্যালারির কিছু চিত্রকর্ম ।

ওরিয়েন্টাল ভিলেজের এদিক ওদিক।

মাহসুরি’স টোম্ব

এটি একটি জাদুঘর ও কালচারাল সেন্টার। আমার সময় স্বল্পতার জন্যে সেখানে যাওয়া হয়নি আর আমার জাদুঘরের প্রতি কোন আকর্ষণ নেই। কিন্তু এই জাদুঘরটি যার নামে হয়েছে, তার কাহিনী অনেক ইন্টারেস্টিং। তাই আপনাদের কাছে শেয়ার করলাম।

35884752_1581740941953256_4381302117244076032_o

মাহসুরির চিত্র। ছবি সংগৃহীত ।  

মাহসুরি ছিলেন একজন মালয় ফোকলেডি। তিনি খুব সুন্দরী ছিলেন এবং সবাই তার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। এমনকি সেই অঞ্চলের প্রধান তাকে বিয়ে করার জন্য আগ্রহী হন, কিন্তু তার প্রথম স্ত্রী এতে বাধা দেন। পরবর্তীতে মাহসুরি একজন স্থানীয় যোদ্ধাকে বিবাহ করেন এবং তিনি সিয়ামিজদের সাথে যুদ্ধে নিহত হন। তার রূপ ও গুনে মানুষ তার ভক্ত হয়ে উঠেছিল।  কিন্তু স্থানীয় প্রধানের স্ত্রী এর দেওয়া এক অপবাদে তিনি অভিযুক্ত হন। পরে তাকে সেই মিথ্যে অপবাদে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়। তিনি বারবার তার নির্দোষ হওয়ার কথা বলেন এবং আকুতি জানান। ১৮১৯ সালে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার মৃত্যুর পূর্বে তিনি এই দ্বীপ ও তাদের মানুষদের অভিশপ্ত করেন যে, এই দ্বীপের মানুষজন কখনই সুখে শান্তিতে থাকতে পারবে না এবং তাদের সাত প্রজন্ম পর্যন্ত এ শাস্তি ভোগ করতে হবে। এবং বাস্তবেও তাই হয়ে ছিল। তার মৃত্যুর পর এখানে সিয়ামিজদের সাথে আঞ্চলীয় অধিবাসীদের যুদ্ধ সংগঠিত হয় ও এর স্থায়িত্বকাল দীর্ঘ হয়। এতে এখানকার সুখ-শান্তি ও শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। কিন্তু সুসংবাদ হল যে, এই অভিশাপের সমাপ্তি সেই বিংশ শতাব্দীর অনেক পূর্বেই শেষ হয় ও এখন লাংকাউই বিশ্বের জনপ্রিয় টুরিস্ট ডেস্টিনেশনের মধ্যে অন্যতম।

image

জাদুঘরের ভেতরের চিত্রকর্ম যা ইতিহাসকে প্রদর্শন করে। ছবি সংগৃহীত।

31206391_2028531647359290_6085851003145575769_n

জাদুঘর প্রাঙ্গন।

 

পরবর্তীতে মালয়েশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী আব্দুর রহমান মাহসুরির স্মৃতি স্মরণে এই জাদুঘর নির্মাণ করেন। এখানে জাদুঘরের প্রদর্শনীর  পাশাপাশি বিভিন্ন কালচারাল প্রোগ্রামও অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন সুভেনিয়র শপ ও ক্যাফে রয়েছে। চাইলে পাশের বাগানটিও ঘুরে দেখতে পারেন। তাই যারা ইতিহাস ও জাদুঘর নিয়ে আগ্রহী, তারা ১০ রিংগিতের একটি টিকিট কেটে ঘুরে আসতে পারেন এই ঐতিহাসিক স্থানটি ।

লাংকাউই ঈগল স্কয়ার

লাংকাউই আসলে এ জায়গাটিতে যে আপনাকে যেতেই হবে। কারন এই ঈগল স্কয়ারটি যে, এই স্থানটির অর্থ বহন করে। সেখানে গেলে দেখতে পাবেন যে, বড় এক ঈগল পাখি এক বড় পাথরের উপর দাঁড়িয়ে আছে তার বিশাল ডানা মেলে। আর এটাই যে, লাংকাউই নামের অর্থ। ”লাং” মানে হল ঈগল আর “কাউই” মানে হল পাথর।

এক নজরে ঈগল স্কয়ার।

এখানে এটা ছাড়া আর দেখার মত বিশেষ কিছু নেই। তবে ছবি তোলার জন্যে হলেও জায়গাটিতে যাওয়া উচিত। দিনের বেলা পর্যটকদের একটু ভিড় থাকে কিন্তু সন্ধ্যের পর জায়গাটি একদম নিশ্চুপ থাকে। আমি গিয়েছিলাম সেই সময়ে। রাতের বেলা রঙিন আলোতে আলোকিত এই ঈগল স্কয়ারকে দেখেছি। এবং রাতের রঙিন আলোতে একে অসাধারণ মনে হয়। এই নিশ্চুপ পরিবেশের জন্যেই লাংকাউইকে আমার শান্ত এক জায়গা বলে মনে হয়েছে। চাইলে উপভোগ করতে পারেন, অপর প্রান্তে অবস্থিত সাগরের খেলা। এটি কুয়াহ জেটির ধারে অবস্থিত এবং এখানে আসলে কুয়াহ জেটির আশেপাশের দোকানগুলো থেকে শপিং করতে ও রেস্টুরেন্টগুলো থেকে খাওয়া দাওয়া করে নিতে পারেন।

এছাড়াও ঘুরে আসতে পারেন আরও বিভিন্ন জায়গা যেমন লাংকাউই ওয়াইল্ড লাইফ পার্ক, ব্যাট কেভ, সেভেন ওয়েলস ওয়াটার ফল ও বিভিন্ন রাইস ফিল্ড ইত্যাদি। কিন্তু রাইস ফিল্ডগুলোতে তেমন দেখার কিছু নেই, আমাদের দেশের ধানক্ষেতগুলোর মত আরকি।

থাকা ও খাওয়া-দাওয়া ব্যবস্থা

দেশের বাইরে ঘুরতে গেলে আমরা সর্বপ্রথম চিন্তা করি যে, কোথায় গিয়ে থাকবো এবং খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা কিভাবে করবো আর খরচই বা কত হবে? এটা যৌক্তিক চিন্তা। আপনি যদি লাংকাউই সফরে আসেন তবে আমি বলবো যে, আসার পূর্বে এদেশ থেকেই হোটেল বুকিং দিয়ে আসা। কারন এখানে এসে হোটেল খোঁজা হবে বোকামীর কাজ, সে আপনি কলকাতা বাদে যেখানেই যান না কেন। এখানকার একটা দিক হল যে, হোটেল বা রিসোর্টগুলো একটি আরেকটি থেকে অনেক দূরে। সাধারণত এগুলো ভিলেজ এরিয়া সাইডে অবস্থিত। আপনি পেনতাই চেনাং বা কুয়াহ টাউনে অনেকগুলো হোটেল একসাথে পাবেন। কিন্তু পেনতাই চেনাং এরিয়াতে থাকতে হলে আপনার খরচ একটু বেশি হতে পারে আর কুয়াহ টাউনে থাকলে সমস্যা হল এখান থেকে টুরিস্ট স্পট গুলো অনেক দূরে হবে। তাই ভিলেজ সাইডে থাকাটাই ভাল হবে। এখানকার পরিবেশ অনেক নিরিরবিলি ও শান্ত এবং হোটেল সার্ভিসও অনেক ভাল। আমার অভিজ্ঞতায় এটা ছিল এক দারুন অভিজ্ঞতা।

আর এখানে আগে বুকিং করে আসার আরেকটি ব্যাপার হল যে, এখানে প্রায় সব হোটেলই বিভিন্ন দেশের টুরিস্টদের অগ্রিম বুকিং থাকে, যার কারনে হোটেল পাওয়াটা আরও বেশী কষ্টকর হয়ে উঠবে। তাই এখানে আসার পূর্বে আপনি Booking.com, Agoda কিংবা Expedia থেকে যেকোন মানের হোটেল আপনার পছন্দমত বুকিং করতে পারেন। আপনি যদি এখানকার কোন মাধ্যম হতে বুকিং করতে চান তবে Flight Expert হবে বাংলাদেশের মধ্যে বেস্ট অপশন। চাইলে আপনি দেশীয় কোন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে কোন ট্যুর প্যাকেজ ও নিতে পারেন। আপনি যদি আমার মত একা হন তবে, উপরের মাধ্যমগুলোই আপনার ভরসা। হোটেলগুলোতে সর্বনিম্ন ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০০ টাকার মধ্যে আপনি পার নাইটের জন্য রুম পেয়ে যাবেন। আমি এখানে কয়েকটি টু ও থ্রি স্টার হোটেলের নাম উল্লেখ করলাম। এগুলো হল – সালসা রিসোর্ট লাংকাউই, লাভিগো রিসোর্ট, হোটেল এশিয়া, বেলা ভিসতা এক্সপ্রেস হোটেল ইত্যাদি।

খাওয়া-দাওয়া নিয়ে চিন্তিত হবার কোন কারণ নেই। এখানে প্রায় সবখানেই হালাল খাবার পাওয়া যায়। খরচ ও খুব একটা বেশি নয়। আপনি যদি এখানকার লোকাল ফুড  বা সীফুড ট্রাই করেন তবে আপনার খরচ কম হবে। প্রতি মিলে আপনার খরচ হতে পারে ৫ রিংগিত থেকে ১৫ রিংগিত পর্যন্ত। যদি আপনি দেশী কিংবা ইন্ডিয়ান ফুড খেতে চান তবে, সেখানে ২৫ থেকে ৩০ রিংগিত এর মত খরচ হতে পারে। এছাড়া এখানকার ইন্টারন্যাশনাল ফুড চেইন শপ যেমন KFC, Pizza Hut, Burger King, McDonald’s ও Starbucks এগুলোতে কম খরচে খাওয়া-দাওয়া সম্ভব। কয়েকটা বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টও রয়েছে সেখানে। চাইলে যেতে পারেন সেখানে।

IMG_20190107_161726.jpg

সী বিচের পাশে স্ট্রীটফুড কর্নার ।

যাতায়াত ও অভ্যন্তরীন ঘুরাঘুরির ব্যবস্থা

আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে এখানে আসতে চান তবে আপনাকে প্রথমে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর এসে পৌঁছাতে হবে। এখানে আসবার পর আপনি যেকোন উপায়ে লাংকাউই যেতে পারেন। আপনি চাইলে ডিরেক্ট ফ্লাইট অথবা বাস ও ফেরীর মাধ্যমে যেতে পারেন। যদি আপনি সড়ক পথে যেতে যান তবে আপনাকে কিছুদূর বাস পর্যন্ত ও কিছুদূর প্যাসেঞ্জার ফেরীতে করে লাংকাউই পৌঁছাতে হবে। কিন্তু এতে আপনার ৬ থেকে ৮ ঘন্টা সময় ব্যয় হতে পারে। আপনি যদি ফ্লাইটে যান তবে সময় লাগবে ১ ঘন্টা। এবং যাতায়াত ভাড়ার পার্থক্য খুব একটা বেশি নয়। ফ্লাইটে গেলে এয়ার এশিয়া হবে সবচাইতে ভাল অপশন। প্রায় ২ ঘন্টা পর পর লাংকাউই এর উদ্দেশ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে এই এয়ারলাইন্সটি। কুয়ালালামপুর-লাংকাউই- কুয়ালালামপুর আপডাউন ভাড়া পরবে বাংলাদেশী টাকায় ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে। এক হিসাবে ঢাকা – কক্সবাজার ফ্লাইট রুটের ওয়ানওয়ে ফ্লাইটের ভাড়ার চেয়েও কম। আপনি চাইলে এখানে এসে টিকিট করতে পারেন বা দেশীয় কোন মাধ্যম যেমন Flight Expert থেকেও অগ্রিম টিকিট বুকিং করতে পারেন। বলে রাখা ভাল যে, এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটগুলো KLIA 2 থেকে পরিচালিত হয় যা কুয়ালালামপুর এর মূল বিমানবন্দর KLIA থেকে একটু দূরে এবং KLIA থেকে ২ রিংগিত খরচে ট্রেনে করে KLIA 2 তে পৌঁছাতে হয় এবং প্রায় আধ ঘন্টার মত সময় লাগে। যারা কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে নেমেই লাংকাউই এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন তাদের এ বিষয়টি মাথায় রাখা ভাল।  এবং অগ্রিম বুকিং করলে খেয়াল রাখবেন যে, আপনার হাতে যাতে পর্যাপ্ত সময় থাকে।

লাংকাউই পৌঁছে আপনি তিন ভাবে সেখানে ঘুরাঘুরি করতে পারেন। গাড়িতে , বাইকে কিংবা প্যাকেজ গ্রুপ টুরে বাসে করে। প্যাকেজ টুরে যদি ঘুরাঘুরি করতে চান তবে আপনি সেখানে অনেক ট্রাভেল এজেন্সি পাবেন যারা আপনাকে একটা না একটা ব্যবস্থা করে দিবে। যেহেতু আমি এ পদ্ধতিতে না গিয়ে আমি গাড়ি ভাড়া করে নিজের মত করে ঘুরেছি তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।  তবে আপনি যে হোটেলে উঠবেন, তারাই আপনাকে একটা ব্যবস্থা  করে দিতে পারবে।

এখন আসি বাইকে বা গাড়িতে করে ঘুরাঘুরি সম্পর্কে। লাংকাউই ঘুরাঘুরির জন্য এটাই সবচেয়ে ভাল উপায় ।

আপনি যদি লাংকাউই ঘুরতে যান এবং ড্রাইভিং জানেন, তবে বেরিয়ে পড়ুন আপনার প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে অথবা একা একা। ঘুরে দেখুন পরিবেশ ও প্রকৃতিকে। বলা ভাল যে, গাড়ি ভাড়া করে সেল্ফ ড্রাইভিং করে ঘুরলে, আপনি অনেক খরচ বাচাতে পারেন। আপনি বাইক ভাড়া করে ঘুরতেও পারেন। এতে খরচ আরও কমবে। কিন্তু পাহাড়ি রাস্তায় বাইক বা স্কুটি চালানো অনেক বিপদজনক। আমার এক্সপেরিয়েন্সে, এটা ছিল দেশের বাইরে প্রথম ড্রাইভিং এক্সপেরিয়েন্স। লাংকাউই এর রোডগুলো ছিল অনেক সুন্দর ও থ্রিলিং। প্রশস্ত রাস্তা ও আঁকাবাঁকা টারনিং আপনার ড্রাইভিং এক্সপেরিয়েন্সকে করবে মনমুগ্ধকর। আশেপাশের দৃশ্য আপনাকে দিবে প্রশান্তি। তাই আমি লাংকাউই এর এ মাথা থেকে ও মাথা চষে বেড়িয়েছি আপন মনে।লাংকাউইতে আপনি কিছুক্ষন পর পর রাস্তার পাশে অনেক সী বিচ পাবেন। রাস্তার ধারে গাড়ি পার্ক করে ঘুরতে পারেন সেই অচেনা সী বিচগুলোতে। ওসব জায়গায় পর্যাপ্ত পার্কিং স্পেস রয়েছে। থামতে পারেন লোকাল রেস্টুরেন্টগুলোতেও। সেখানেও একই পারকিং সুবিধা আছে এবং সেখানকার খাবারের স্বাদ সেরকম।

লাংকাউইতে ড্রাইভিং করে ঘুরার সময়ে।

পরামর্শ – আপনাকে সেখানে গাড়ি চালাতে হলে আপনার অবশ্যই ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা প্রয়োজন। আপনার যদি এদেশে পারসোনাল লাইসেন্স থাকে, তবে আপনি সহজেই বাংলাদেশ অটোমবিল এসোশিয়েসন্স থেকে মাত্র ২৫০০ টাকার বিনিময়ে এটা করিয়ে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্টস সাবমিট করতে হবে। আপনি যদি লাংকাউইতে সকল স্পট ঠিক মত ঘুরে দেখতে চান তবে এটাই আপনার চিপ অপশন। কারণ সেখানে ট্যাক্সি ভাড়া অনেক বেশি। এ মাথা থেকে ও মাথা যেতে গড়ে ৫০ রিংগিত এর মত খরচ করতে হয়। আর সারাদিনের জন্যে গাড়ি ভাড়া নিলে ১০০ থেকে ২০০ রিংগিত খরচ হতে পারে। আমি সেখানে একটি প্রোটন সাগা গাড়ি ভাড়া করেছিলাম, যার ভাড়া ছিল দৈনিক ৬০ রিংগিত করে। এখানে গাড়ি ভেদে খরচ কম বেশি আছে। তেল খরচ হয়েছিল মোট ২৫ রিংগিত এর মত। তিন দিনে মোট খরচ হয়েছে ২০৫ রিংগিত। বাইক ভাড়া আরও কম, দৈনিক ২৫ রিংগিত এর মত।

সতর্কতা – আপনি যদি ঢাকা শহরে অনেকদিন ধরে গাড়ি চালিয়ে অভ্যস্ত বা ঠিকঠাক মত চালাতে পারেন, তবে আপনার জন্য এটা কোন ব্যাপার না।কিন্তু সেখানকার নিয়মকানুন আপনাকে মেনে চলতে হবে। সিগনাল লাইট বুঝে রাস্তা পার হতে হবে এবং রোড সাইন লক্ষ্য করতে হবে। আমরা ঢাকা শহরে যা করি যেমন, সোজা রাস্তায় সিগনাল থাকলে আমরা বাম দিক দিয়ে কেটে পড়ি সেখানে সেটা করবেন না। সবুজ বাতি জ্বললে আপনি রাস্তা পার হবেন।সবাই এটা মেনে চলে। এখানকার রাস্তা খুবই সুন্দর, বড় ও চওড়া, এমনকি টারনিং রাস্তাগুলোও। সোজা রাস্তায় সর্বোচ্চ গতি ১০০ kmh থাকে কিন্তু বাকানো রাস্তায় গতি ৩০ থেকে ৪০ kmh রাখাই ভাল। বিশেষ করে আমার হোটেল থেকে ওরিয়েন্টাল ভিলেজে লাংকাউই কেবল কার স্টেশনে যাবার রাস্তাটা মারাত্বক ভয়ংকর। সেখানে টারনিং গুলো অনেক বেশি বাকানো। তাই সেখানে সাবধানতা অবলম্বন করবেন এবং রোড সাইনগুলো ভাল ভাবে লক্ষ্য করবেন। গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে আপনি সহজেই যেকোন জায়গায় যেতে পারবেন কিন্তু গুগল ম্যাপের সর্টকাট অপশন ব্যবহার করবেন না। সর্টকাট রাস্তাগুলো অনেক সরু এবং আপনি রাস্তা হারিয়ে ফেলতে পারেন। তাই মেইন রোড দিয়ে যাওয়াটাই ভাল। সেখানকার সকল ড্রাইভাররা সেফলি গাড়ি চালায় ও ম্যাক্সিমাম ড্রাইভারই হল টুরিস্ট। কিন্তু কিছু লোকাল স্টুপিড ড্রাইভার ও বাইকার আছে যারা মারাত্বক বেপরোয়া ড্রাইভ করে। তাই ওদের থেকে সাবধান থাকুন। এবং কোন গাড়ি যদি ওভারটেক করার দরকার হয় তবে দেখেশুনে তা করুন। আর কোথাও যদি পার্কিং এর জন্য যথেষ্ট স্পেস না থাকে, তবে সেখানে গাড়ি পার্ক করবেন না। বেপরোয়া ড্রাইভিং থেকে বিরত থাকুন, ড্রাইভিং এর সময় সিটবেল্ট বেধে নিন। 

শপিং

বলে রাখা ভাল যে, পুরো লাংকাউই এলাকাটি হল ডিউটি ফ্রি। ডিউটি ফ্রি জোন হওয়ায়, এখানে সকল জিনিসের দাম সস্তা। এখানে এমনকি আপনি কলকাতার চেয়েও সস্তায় সকল জিনিস কিনতে পারবেন শুধুমাত্র শাড়ি বা অন্যান্য দেশীয় ট্রেডিশনাল আউটফিট ছাড়া। এছাড়া যদি আপনি কসমেটিক্স, ইলেকট্রনিক্স , জামা – কাপড়, জুতা, গৃহস্থালী জিনিসপত্র ও  চকলেট বা ড্রাইফুড আইটেম পণ্য কিনতে চান,  তবে এখানকার চেয়ে সস্তায় আর কোথাও পাবেন না। রাজধানী কুয়ালালামপুরে ও না। উদাহরণ  স্বরূপ, যদি আপনি কোন  একটা ব্রান্ডের ক্যামেরা যদি ঢাকাতে সেটা দাম হয় ২০ হাজার টাকা তবে সেটা আপনি কুয়ালালামপুরে পাবেন ১৮০০০ টাকায় কিন্তু লাংকাউইতে সেটা পাবেন ১০০০০ টাকায়।  আমি অরিজিনাল US Polo ব্রান্ডের দুটি পোলো টি শার্ট কিনেছি বাংলাদেশী টাকায় মাত্র ৮০০ টাকা খরচ করে  তবে ভাবুন যে,   এখানে জিনিসপত্রের দাম কত সস্তা। তাই সেখানে গেলে শপিং করতে ভুলবেন না কিন্তু।

অবশেষে বলতে চাই যে, যেখানেই ভ্রমণ করুন না কেন সবসময় খেয়াল রাখবেন আপনার জন্য পরিবেশ যাতে নোংরা না হয়। পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের সর্বদা সচেতন থাকা উচিত। আর এমন কোন কাজ করবো না যাতে, বাংলাদেশীদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।

So, travel more & be happy. Always remember that your mobility is your freedom.

 

 

Leave a comment